২৬শে মার্চ শনিবার ৪১তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বাঙালী জাতি।
বরাবরের মতো এবারও সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহীদ, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নেতা এবং সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে। একই সঙ্গে তারা স্মরণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে হারানো স্বজনদের।
শনিবার ভোরে রাজধানীতে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচীর সূচনা করা হয়। এ উপলক্ষে দিনভর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পন ছাড়াও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। জাতীয় ও নানা রংঙের পতাকা এবং আলোকসজ্জায় সাজানো হয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও সড়ক। বেতার-টেলিভিশনে প্রচার করা হয় নানা ধরনের বিশেষ অনুষ্ঠান। সংবাদপত্র গুলি ঐ দিন বের করে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
সকাল থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে মানুষের ঢল। ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধের বেদি। ভোর ছয়টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো:জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল গার্ড অব অনার দেয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর সবার জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, পাড়ায় মহল্লায় বিভিন্ন সংগঠন নানা রকম কর্মসূচী আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যতম শ্রোতা সংঘ “সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব” এবং মিরপুর উত্তর বিশিল জনকল্যাণ সমিতি যৌথ উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী চিত্রাংকন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ প্রতিযোগিতায় যেসকল শিশুরা অংশগ্রহন করেছে তারা সকলে অনেক গরিব, কারো পরিবার রাস্তায় থাকে রাস্তায় খায়, কারো থাকার ব্যবস্থা বা বাসস্থান না থাকায় মাজারে থাকে, আবার কেউ খুবি নিন্ম মানের নোংরা বস্তীতে থাকে। এ ধরনের শিশুরা সমাজের সবধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিশুদের পরিবারের সকলে অশিক্ষিত ও গরীব হওয়ায় তারা শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত। এমনকি শিশুর ব্যক্তিগত সুরক্ষা, শিশুর বেড়ে উঠা, পরিচর্যা এসব বিষয়েও শিশুদের বাবা মা অনবিজ্ঞ। ফলে শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং নানা রকম বিপদের সন্মুক্ষিন হচ্ছে। “সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব” দীর্ঘ দিন ধরে এই ধরনের সুবিধাবঞ্চিত এবং সমাজে অবহেলিত কিছু পথশিশুদের বিনামূল্যে সেবা দিয়ে আসছে। সেবা গুলির মধ্যে হচ্ছে খেলাধুলার মাধ্যমে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান, পরিবারগুলিকে সচেতনতা বৃদ্ধি, মনোসামাজিক সহায়তা, শিশুদের বিনোদন দেওয়া ইত্যাদি। “সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব” এসব সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য এসব সম্পর্কে পরিচিত করে তুলতে বিশেষ এই গ্রুপকে নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নানারকম কর্মসূচী গ্রহন করে থাকে।
এবারের স্বাধীনতা দিবসে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব এবং মিরপুর উত্তর বিশিল জনকল্যাণ সমিতির যৌথ উদ্যোগে এইসকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বাঙালীর অহঙ্কার মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে ধারণা দিতে এই ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব এবং মিরপুর উত্তর বিশিল জনকল্যাণ সমিতির এই “চিত্রাংকন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা”-য় ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সি মোট ৫০ জন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিযোগিতার আয়োজনগুলির মধ্যে ছিলো, চিত্রাঙ্কন, দাদুর খেলা (বড়দের), দাদুর খেলা (ছোটদের) এবং পুকুড়-পাড় খেলা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ৪টি ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে ৪টি করে মোট ১৬টি পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে।
চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে-
প্রথম পুরস্কার - সোমা আক্তার,
দ্বিতীয় পুরস্কার - নুরনাহার,
তৃতীয় পুরস্কার - মো:হূদয়,
চতুর্থ পুরস্কার - মো:স্বাধীন,
দাদুর খেলা (বড়) প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে-
প্রথম পুরস্কার - সোমা আক্তার,
দ্বিতীয় পুরস্কার - মো:স্বাধীন,
তৃতীয় পুরস্কার - মো:রিয়াজ হোসেন,
চতুর্থ পুরস্কার - নাছিমা আক্তার,
দাদুর খেলা (ছোট) প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে-
প্রথম পুরস্কার - নুরজাহান,
দ্বিতীয় পুরস্কার - মুম,
তৃতীয় পুরস্কার - মো:রনি,
চতুর্থ পুরস্কার - মো:হূদয়,
পুকুড়-পাড় খেলা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে-
প্রথম পুরস্কার - ফাতেমা বেগম,
দ্বিতীয় পুরস্কার - পাখি আক্তার,
তৃতীয় পুরস্কার - শারমিন আক্তার,
চতুর্থ পুরস্কার - মো:রমজান হোসেন,
শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের পরিচালক দিদারুল ইকবাল, ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসেনার্স ক্লাব বাংলাদেশ এর সভাপতি তাছলিমা আক্তার লিমা, বিশিল জনকল্যাণ সমিতির সদস্য আজিজুল হক, স্থানিয় ব্যবসায়ী নেজামুল হক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের স্বাস্থ্যসেবিকা সাকিয়া বেগম প্রমূখ।
এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে যারা পুরস্কার পায়নি তাদের সকলকে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের পক্ষ থেকে ১টি করে কলম ও ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়েছে। শিশুরা উপহার গুলি পেয়ে অনেক আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছে। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার প্রদানের পূর্বে শিশুদের মাঝে মহান স্বাধীনতা দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালন করেন ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসেনার্স ক্লাব বাংলাদেশ এর সভাপতি তাছলিমা আক্তার লিমা।
অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এসম্পর্কে আরো বিস্তারিত ছবি দেখতে লগইন করুন: http://cri-sarc.blogspot.com/2011/04/independence-day-2011.html