শ্রোতাবন্ধুরা আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন গত ৩ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট
শি চিন পিং তার রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান,
উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তান সফর শেষ করেছেন এছাড়া কিরগিজস্তানের বিশকেকে-তে অনুষ্ঠিত
শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর শীর্ষনেতা পরিষদের ১৩তম অধিবেশনে অংশ
নিয়েছেন।
এই উপলক্ষ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যে ৭টায় চীন
আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাদেশ মনিটর এবং সিআরআই সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব
বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক দিদারুল ইকবাল বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন জেলার
শ্রোতাদের নিয়ে একটি বিশেষ মোবাইল কনফারেন্স আয়োজন করেন। কনফারেন্সের বিষয় ছিল “চীনের প্রেসিডেন্ট শি
চিন পিং-এর মধ্য এশিয়া সফর সম্পর্কে শ্রোতাদের মূল্যায়ন”। এ প্রসঙ্গে শ্রোতারা শি চিন পিং-এর সফরের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর
ভাবে পর্যালোচনা করেন এবং তাদের মতামত ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
কনফারেন্সে অংশগ্রহন
করেন, সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বেলাল; চট্টগ্রাম
থেকে প্রফেসর শামসুদ্দিন শিশির, ডা: এস.এম আবুল ফজল, সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন আশরাফ,
নুরুল ইসলাম; যশোর থেকে হুমায়ুন রেজা; ফরিদপুর থেকে এম.এম.গোলাম সারোয়ার; চুয়াডাঙ্গা
থেকে প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম, হায়দারুল ইসলাম এবং কিশোরগঞ্জ থেকে এম.এইচ.মামুন রশিদ।
কনফারেন্সের নেটওয়াকিং-এ সহযোগিতা করেছেন, সিআরআই সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের যুগ্ম
সম্পাদক মাহমুদ হায়দার
জীবন।
বিশেষ মোবাইল
কনফারেন্সে অংশগ্রহনকারী শ্রোতাবন্ধুরা অভিমত জানাতে গিয়ে বলেন- চীনের প্রেসিডেন্ট
শিচিন পিং এর মধ্য এশিয়া সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন
থেকে বিযুক্ত মধ্য এশিয়ার এই চারটি দেশ সফরের মাধ্যমে চীনের সাথে প্রতিবেশী
দেশগুলির পারস্পরিক সৌহাদ্য ও উন্নয়নের এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
শিচিন পিং এর এবারের
সফর চারটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে যে আলোচনা হচ্ছে বিশেষত:
শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ মৈত্রী ও পারস্পরিক সম্পর্কের আস্থার স্থাপন; মধ্য
এশীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নতি; যৌথভাবে “রেশম পথ অর্থনীতি এলাকা”
প্রতিষ্ঠার কৌশলগত দিক উত্থাপিত হওয়া এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কার্যকর
উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান করা। আলোচকরাও দৃঢ় ভাবে আশা করেন চীনের কর্তৃপক্ষ এসকল
সাফল্য কাজে লাগিয়ে সক্রিয়ভাবে সহবস্থানের নীতি বাস্তবায়ন করবেন। যাতে করে চীনের
সাথে ঐ দেশগুলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো শক্তীশালী হয় এবং এশিয়ার মধ্যে একটি
নতুন জাগরন সৃষ্টি হয়।
“চীন মধ্য এশিয়ার
দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। সর্বভৌমত্ব, ভৌগলিক অখণ্ডতা,
নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা-সম্পর্কিত সমস্যায় তাঁর দেশ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে সমর্থন
দেয়”। চীনের এমন ঘোষণা এই চারটি দেশে শুধু নয় বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর
সাথেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন একই মনোভাব অনুসরন
করবে বলে এশিয়ার নাগরীকরা আশা করে।
চীন মধ্য এশিয়ার
দেশগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ধর্মীয় চরমপন্হী কার্যকলাপ, সহিংসতা, মাদকদ্রব্য
পাচার এবং আন্তদেশীয় অপরাধ দমন করার প্রেক্ষিতে যে মনোভাব দেখিয়েছে সেটি যেন বাংলাদেশসহ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যেও একই মনোভাব পোষণ করে চীন, এমনটিই আলোচকরা আশা ।
“ইউরোপ ও এশিয়ার
বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ আরো জোরদার করার জন্য আমাদের উচিত নতুন সহযোগিতার
পদ্ধতি খোঁজা। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহযোগিতার ক্ষেত্র
বাড়ানো সম্ভব”। চীনের এই ধারণাটি এখানকার জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তারা
মনে করেন এই পদ্ধতিতে আগামী দিনগুলিতে চীনের নেতৃত্বে এশিয়ার দেশগুলি বিশ্ব
অর্থনীতিতে চালকের আসনে অবস্থান করবে।
চীন সাংস্কৃতিক
যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে উজবেকিস্তানে কনফুসিয়াস ক্লাসরুম চালু করার যে পরিকল্পনা
নিয়েছে তাতে আমরা স্বাদুবাদ জানায়। উল্লেখ্য পূর্ব থেকে বাংলাদেশেও কনফুসিয়াস
ক্লাসরুম চালু আছে। ইতিমধ্যে সিআরআই কনফুসিয়াস ক্লাসরুম বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন
সৃষ্টি করেছে। বহু বাংলাদেশী এই ক্লাসরুমের মাধ্যমে মাতৃভাষায় চীনা ভাষা শিখে নিজেদেরকে
সম্মৃদ্ধ করেছে এবং চীনের সাথে একটি “কনফুসিয়াস” সেতুবন্ধন তৈরী করেছে। আমরা মনে
করি এই ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
একটি দেশের উন্নয়নের
জন্য অন্যতম চালিকা শক্তি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস তথা জ্বালানীসম্পদ এবং বিদ্যুত। এই বিষয়েও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর আগ্রহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর
উন্নয়নের জন্য এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা আশা করি শুধু মধ্য এশিয়ায় নয় বাংলাদেশেও
বিদ্যুত ও জ্বালানীখাতসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে চীনের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর সফরের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিশ্বের ধনী দেশগুলোর
সংগঠন ‘জি-২০’ এর অষ্টম শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণ। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বের ২০টি
ধনী দেশের সম্মেলনে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং তার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে যে চারটি প্রস্তাব উপস্থাপন
করেছেন, তা অত্যন্ত ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ। ধনী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক
অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পৃতি বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি এবং সেই সাথে অর্থনৈতিক
ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্বে চীন খুব শীঘ্রয় প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের
বিশ্বাস।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর মধ্য এশিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর চলাকালে সিআরআই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব
বাংলাদেশ এবং সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের মধ্যে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এখানেও এ বিষয়ে উপস্থীত সদস্যরা শি চিন পিং এর সফর নিয়ে আলোচনা করেন।
এ থেকে বুঝা যায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর সফরকে কেন্দ্র করে
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ তথা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাবন্ধুরা
কত গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর মধ্য এশিয়া সফরকে
কেন্দ্র করে বাংলাদেশী শ্রোতাদের অংশগ্রহণ ভিত্তিক এই টেলি কনফারেন্সের আলোচ্য
বিষয়বস্তু চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের পরিচালক মাদাম ইউ
কোয়াংইউয়ে চীনা ভাষায় অনুবাদ করে সিআরআই-এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন
বলে সিআরআই মনিটর দিদারুল ইকবালকে জানিয়েছেন।
তাছলিমা আক্তার লিমা
উপ-পরিচালক ও ঢাকা
জেলা সভাপতি
সিআরআই-সাউথ এশিয়া
রেডিও ক্লাব বাংলাদেশ
বাড়ী- ৩৩৬, সেকশন- ৭,
রোড- ২,
মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬,
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment