রংপুর বেতারে যোগদান করি ২০১৩ সালের ২০ জুন। তখন আমি ডি আর ডি অর্থাৎ উপ-আঞ্চলিক পরিচালক। তৎকালীন আঞ্চলিক পরিচালক এস এম জাহিদ হোসেন স্যার আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এবং একটি রেডিও সেট উপহার দেন। ফুল দিয়ে বরণ করার রীতি এখনকার মতো অতোটা প্রচলিত ছিলনা। আমি ভীষণ খুশী হয়েছিলাম সেদিন। এরপর থেকে যত কর্মকর্তাই আমার হাত ধরে যোগদান করেছেন তাদের সকলকে আমি ফুল দিয়ে বরণ করেছি। শুধু তাই নয়, বদলীজনিত বিদায় কিংবা চাকরি থেকে অবসরের প্রাক্কালে প্রতিজন কর্মকর্তা /কর্মচারী/নিজস্ব শিল্পীদের মাঝে এই ধারাটি বহাল রাখতে পেরেছি। এটি আমার সাফল্য নয়, এটি ভাললাগা, আমাকে মানসিকভাবে প্রশান্তিতে ভরিয়ে রাখে।
যোগদানের কিছুদিন পরেই আমার উপর দায়িত্ব অর্পিত হয় আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার। বেতারে প্রশাসন ও হিসাবের কাজ শেখার এটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। স্যার ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন ও দক্ষ কর্মকর্তা। অনেক কাজ তিনি নিজ হাতে ধরে শিখিয়েছেন।
স্যার এর সিলেট বদলী হওয়ার পর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল হক স্যার। স্যার এর একটি বিষয় আমার খুব ভাল লাগতো তা ছিল কোন প্রোগ্রাম সফল করার জন্য যে আয়োজন। একটি সফল প্রোগ্রামের জন্য সকলের সাথে আলোচনাক্রমে ছোট ছোট কমিটি করে দিতেন। তবে খুব ধীরস্থিরভাবে চলতেন। একটা প্রোগ্রাম চালু করতে অনেক ভাবনা চিন্তা করতেন। স্যার এর সময়েই সাধারন জ্ঞানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান "সেরা ধীমান" শুরু করতে পারি। ধীমান কিভাবে পরিচালিত হবে তার একটি পরিপুর্ণ রূপরেখা দেবার পরই স্যার এর বিশ্বাস জন্মে আমি এই অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে পারবো। সত্যি বলতে কি "সেরা ধীমান" বাংলাদেশ বেতার রংপুরের একটি অনন্য প্রোগ্রাম। এস এম এসের মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রীরা রেজিষ্ট্রেশন করে। সকল অংশগ্রহনকারী এখানে স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী। টেলিফোনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীগণ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে প্রশ্নের জবাব দেন। এক্ষেত্রে অংশগ্রহনকারীদের রেডিওতে আসারও প্রয়োজন নেই। রিয়েলিটি শো ভিত্তিক এই অনুষ্ঠান কয়েকটি পর্ব পরিচালনার পর একজনকে সেরা ধীমান নির্বাচন করা হয় যার জন্য থাকে আকর্ষণীয় গিফট। সেরা বিশের জন্যও থাকে কিছু না কিছু পুরষ্কার। ইনোভেটিভ এই প্রোগ্রামটি পরবর্তীতে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বর্তমানে এর সিজন এইট চলছে। একটি সিজন শেষ করতে এক বছর বা তার বেশী সময় লেগে যায়। বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক সকল পরীক্ষার প্রশ্নের আলোকে এর প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। একটা সিজনে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশী প্রশ্ন করা হয় ছাত্ররা শিখে তার চেয়ে অনেক বেশী। প্রতি সিজনেই ধীমানের নিজস্বতা বজায় রেখে এর কিছু নতুন বিষয় সংযোজিত হয়, পরিবর্তন/ পরিবর্ধন হয়। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে সারা বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে এই সেরা ধীমান পরিচালিত হয়। আমি মনে করি বেতারে ইনোভেটিভ প্রোগ্রামের যাত্রা শুরু মুলত ধীমান দিয়েই।
হক স্যার এর বিদায়ের পর আসেন সায়েদ মোস্তফা কামাল স্যার। একজন সরকারি কর্মকর্তার সাহস থাকা খুব প্রয়োজন। সেই সাহসের ব্যাপারটি শিখেছিলাম কামাল স্যার এর কাছ থেকে। ক্ষমতাকে কিভাবে জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়, কিভাবে শ্রোতাদের চাহিদা পূরণ করা যায় তা মূলত: স্যার এর কাছ থেকেই শিখেছি। যে কোন ইতিবাচক কাজে স্যার কখনোই না করেন নি। বলতেন, "করো"।
সায়েদ মোস্তফা কামাল স্যার এর ঢাকা কেন্দ্রে বদলীর পর আমাকে আঞ্চলিক পরিচালক এর দৈনন্দিন দায়িত্ব দেয়া হয়। এবং প্রায় তিন বছর উপ-আঞ্চলিক পরিচালক এর দায়িত্বের পাশাপাশি আঞ্চলিক পরিচালক এর দায়িত্ব পালন করি। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পদোন্নতির পর ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আঞ্চলিক পরিচালক এর দায়িত্বভার গ্রহন করি। ১৬ মে ২০২৪ সালে আমি অত্র কেন্দ্র থেকে অবমুক্ত হই। এই ছয় বছরে আঞ্চলিক পরিচালক এর দায়িত্ব পালনকালে নানান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। অনেক নতুন নতুন প্রোগ্রাম হাতে নেই। এর মধ্যে বেশ কিছু ছিল একেবারেই নতুন এবং সে অনুষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রশংসিতও হয়। আজ সেই অনুষ্ঠান আর নানাবিধ কর্মকান্ড নিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে। নতুন সংযোজিত এবং পরিমার্জিত/পরিবর্ধিত অনুষ্ঠানগুলোর নাম
# একাত্তরের বীরত্বগাথা (ভিডিও সংযোজন, সময় বৃদ্ধি, এ পর্যন্ত ৮৫ জন বীরমুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহন ও ইউটিয়বে আপলোডকরণ)
# গাড়িয়াল বন্ধু (ফেসবুক লাইভ, সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিনত করা)
# জীবনের গল্প
# এফএম ১০৫.৬ চালু করা
# গানে গানে আড্ডা
# আলোকিত তারার গল্প, সুরের মানুষ, গুলবাগিচা
# গল্প স্বল্প গান (ফেসবুক লাইভ)
# সমসাময়িক (ফেসবুক লাইভ)
# লাইফ টার্গেট (ক্যারিয়ার প্লানিং বিষয়ক, ফেসবুক লাইভ)
# প্রানের মানুষ (রবীন্দ্র সংগীতের অনুরোধের গান, ফেসবুক লাইভ ফোন ইন)
# আমার গানের বুলবুলি (নজরুল সংগীতের অনুরোধের গান, ফেসবুক লাইভ ফোন ইন)
# চিরায়ত বাংলা (ভাওয়াইয়া ছাড়া অন্যান্য লোকগান এবং কবিতার অনুরোধ ভিত্তিক ফেসবুক লাইভ ফোন ইন)
# হামদ ও নাত (রাগভিত্তিক ২২ টি হামদ ও নাত সৃষ্টি)
# দেশাত্মবোধক গান (১৫/২০ টি জাতীয় মানের গান সৃষ্টি
# ঝংকার (৩০ মিনিটের শাস্ত্রীয় সংগীত এর অনুষ্ঠান)
# এ মাসের ভাওয়াইয়া (প্রতি মাসে একটি করে নতুন ভাওয়াইয়া গান সৃজন)
#এ মাসের পল্লীগীতি (প্রতি মাসে একটি করে নতুন পল্লীগীতি সৃজন)
# গানে গানে
কিছুক্ষন (ফেসবুক
লাইভের আওতায় নিয়ে
আসা)
# ভাওয়াইয়া গীতিনকশা,
# কবি ও
কবিতা (কবিদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান)
# বিদ্যালয় ম্যাগাজিন
# বিতর্ক প্রতিযোগিতা (রিয়েলিটি শো
ভিত্তিক, স্কুল
এবং কলেজ পর্যায়ে)
# আইন জিজ্ঞাসা (ফেসবুক লাইভে নিয়ে
আসা)
# সুখীজীবন ও
ক্ষেতেখামারে অনুষ্ঠানের ফোন ইন অনুষ্ঠান ফেসবুক লাইভের আওতায়
নিয়ে আসা
# আলোর পরশ
(ইসলাম ধর্মের সওয়াল
জবারের অনুষ্ঠান ফেসবুক
লাইভে নিয়ে আসা)
# অমৃতবানী (সনাতন
ধর্মের সওয়াল জবারের
অনুষ্ঠান চালুকরন)
# শিশুদের অনুষ্ঠান সবুজমেলার সময়
৩০ মিনিট থেকে
বাড়িয়ে ৫৫ মিনিটে
উন্নীতকরণ
# পালাগানের চাংক
বৃদ্ধিকরন, ইউটিউবে আপলোডকরন
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও
সাফল্য:
# সোশাল মিডিয়ার (ফেসবুক এবং ইউটিউব)
মাধ্যমে অনুষ্ঠান পরিবেশন (রংপুর
বেতার থেকেই যাত্রা
শুরু, ফেসবুক মনিটাইজেশন এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত সর্বশেষ ১,৮৭,৭৫২
টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান
# রেকর্ড সংখ্যক
অডিশন/গ্রেডেশন
# প্রথমবারের মতো
অতিথি সংগীত প্রযোজক তালিকাভুক্তকরণ
# ট্র্যাক রেকর্ড চালুকরন
# জনগনের অংশগ্রহনে শ্রোতাক্লাবের কার্যক্রম,
# সম্মাননা পদক
প্রদান ২০২৩
# এপিএ পর
পর তিনবার চ্যাম্পিয়ন,
# শুদ্ধাচার পদক
প্রাপ্তি,
# শুদ্ধাচার পদক
চালু (শুরু থেকেই)
# সব পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা
(বিভিন্ন গ্রুপ
চালুকরন)
# ওয়েবসাইট নির্মান
# কবিতা প্রতিযোগিতা (বিজয়ের পঙক্তিমালা)
# নাটক প্রতিযোগিতা (বিজয় দিবস উপলক্ষে)
# শিল্পী, কলাকুশলী, শ্রোতা সংযোগ বৃদ্ধিকরণ
# রংপুর বেতারকে শ্রোতামুখীকরনে সর্বাত্মক প্রয়াস
# সাড়ম্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন (৫১
থেকে ৫৬ তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী)
# মুজিব শতবর্ষ
নিয়ে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান
# পদ্মা সেতু
নিয়ে আধুনিক ও
ভাওয়াইয়া বেশ
কিছু উন্নতমানের গান
সৃজন
# উপস্থাপকদের দক্ষতা
উন্নয়নে নানাবিধ অনুষ্ঠানে সম্পৃক্তকরণ, ওয়ার্কশপ পরিচালনা
# রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানের
বিখ্যাত শিল্পীদের গান সোশাল মিডিয়ায় আপলোডকরন
# রংপুরের সকল
সাহিত্যগোষ্ঠীকে বেতার
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান।
# শ্রোতাদের মাঝে
ক্যালেণ্ডার উপহার
প্রদান
# বৎসরের প্রথমদিনে সকল সহকর্মীদের মাঝে
গিফট বিতরন ও
ফুলেল শুভেচ্ছা।
ইচ্ছে আছে
ধাপে ধাপে অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলবো।
এ পর্বে
শুধু একাত্তরের বীরত্বগাঁথা নিয়ে বলছি।
# একাত্তরের বীরত্বগাঁথা:
ক্যাটাগরির নাম:
মুক্তিযুদ্ধ
অনুষ্ঠানের শিরোনাম: একাত্তরের বীরত্ব
গাঁথা
স্থিতি: ৩০
মিনিট
প্রচার সময়:
সকাল ৯.৩০
প্রচার ব্যাপ্তি: ২০২২ সাল থেকে
চলমান।
আঙিক: সাক্ষাৎকার
লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য: বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক
ইতিহাস জানা এবং
নতুন প্রজন্মের জন্য
সংরক্ষণ।
অনুষ্ঠান শুরুর
পটভূমি: মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল অগনিত বীরমুক্তিযুদ্ধাগণ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে,
দিয়েছে বিশ্বের বুকে
স্বাধীন জাতি
হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার
মর্যাদা। আর
এ সবই সম্ভব
হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতাকামী বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের
জন্য উতসর্গীকৃত আত্মত্যাগ।
আমরা ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫৩
বছর অতিক্রম করেছি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়
যারা ছিলেন তরুণ
আজ তারা প্রায়
সকলেই বয়সের ভারে
ন্যুব্জ, বৃদ্ধ
এবং প্রায় প্রতিদিনই স্বাধীনতা যুদ্ধে
অংশগ্রহনকারী এইসব
বীর সেনানীদের আমরা
চিরদিনের মতো
হারাচ্ছি। তাই
অতি দ্রুত তাঁদের
স্মৃতি সংরক্ষণ করা
এবং সেইসাথে তরুণ
প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস
জানানো দরকার। তরুন
প্রজন্ম যদি
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
শুনে বা দেখে
এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে
মুক্তিযুদ্ধ এবং
বিজয়ের ইতিহাস জানতে
পারে তাহলে তারা
অনুপ্রাণিত হবে
এবং জানবে কিভাবে
দেশের জন্য কাজ
করতে হয়। এই
মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে
বলা মুক্তিযুদ্ধ এবং
বিজয়ের ইতিহাস দর্শক
শ্রোতা বিশেষ করে
তরুন প্রজন্মের মাঝে
ছড়িয়ে দেয়ার অনুপ্রেরণা ও আগ্রহ থেকেই
এই একাত্তরের বীরত্ব
গাঁথা অনুষ্ঠানের ব্যাপক
পরিসরে যাত্রা শুরু।
এখানে বলে
রাখা ভালো, একাত্তরের বীরত্বগাঁথা নামে
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি অনুষ্ঠান পূর্বেও ছিল বাংলাদেশ বেতার
রংপুরে। শুরুতে
অনুষ্ঠানটি ছিল
১০/১৫ মিনিটের। মাসে একটি অথবা
দু'টি। স্টুডিওতে কিংবা স্টুডিওর বাইরে
বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার ধারণ করে প্রচার
করা হতো। বর্তমানে এই অনুষ্ঠানটি প্রতি
সপ্তাহে দুইবার
প্রচারিত হয়।
স্থিতি শুধু ৩০
মিনিট অডিও নয়
এই ৩০ মিনিট
অডিওর পাশাপাশি ভিডিও
করে বাংলাদেশ বেতার
রংপুরের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড
করা হয়।
এই ভিডিওর
পেছনেও একটি ইতিহাস
রয়েছে। ইতিহাসটা বলা
দরকার। প্রায় দুই
বছর আগে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্য ও
সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
বাংলাদেশ বেতার
রংপুর পরিদর্শনে আসেন।
পরিদর্শনের দিন
রংপুর বেতারের অনুষ্ঠানমালা নিয়ে আমি আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে
একটা প্রেজেন্টেশন দেই।
অন্যান্য অনেক
অনুষ্ঠানের কথা
বলার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আমি আমার
পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। আমার পরিকল্পনাটি ছিল এরকম, রংপুর
বেতার অঞ্চলের সকল
জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন
এবং তা রেডিওতে প্রচার করা। মাননীয়
মন্ত্রী বিষয়টি
পছন্দ করেন, প্রশংসা করেন এবং আরো
নতুন কিছু সংযোজনার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন শুধু
অডিও নয়, এই
সাক্ষাৎকারগুলো ভিডিও
করতে হবে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠান আরো যত বেশি
করা যায় তা
করতে হবে। মন্ত্রী মহোদয়ের সফরসংগী প্রধান প্রকৌশলী জনাব
আহমেদ কামরুজ্জামান ( পরবর্তীতে বেতারের ডিজি)
কে ততক্ষনাত নির্দেশনা দেন এই বিষয়টির নোট নিয়ে বেতারের প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এ ধরনের
অনুষ্ঠান প্রচার
করার। তারপর থেকেই
এই অনুষ্ঠানটির ভিডিও
ধারণ শুরু।
শুরুতে আমরা
ভিডিও করেছি মোবাইল
ফোন দিয়ে। কিন্তু
মোবাইল ফোনের ভিডিও
কোয়ালিটি মানসম্মত না হওয়ায় প্রফেশনাল ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে
সাক্ষাৎকার গ্রহনের চেষ্টা করি। সেই
সাথে ক্যামেরা প্রাপ্তির জন্য সদর দপ্তরের সাথেও যোগাযোগ রাখি।
অনুমেয় ছিল সদর
দপ্তর থেকে ক্যামেরা প্রাপ্তি সহজ
হবেনা। সরকারি ক্রয়
একটু সময়সাপেক্ষ বৈকি।
তারপরো আমি ফোন
এবং চিঠি চালাচালি অব্যাহত রাখি।
তবে সুবিধে হয়েছিল
মন্ত্রী মহোদয়ের সফরসংগী কামরুজ্জামান স্যার ছিলেন তখন
ডিজি, তিনি বিষয়টি
জানতেনই। তাই
তিনি পূর্বে কেনা
চারটি ভিডিও ক্যামেরার বিস্তারিত খোঁজ
নিয়ে রংপুর বেতারের জন্য একটি ক্যামেরা বরাদ্দ দেন।
ততদিনে ডিজি
অফিস থেকে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের অডিও,
ভিডিও ধারন করার
অফিস আদেশ জারি
করা হয়েছিল বিধায়
ক্যামেরা প্রাপ্তির পূর্বেই আমরা
রংপুর বেতার প্রফেশনাল ভিডিওম্যান এবং
ক্যামেরা দিয়ে
ভিডিও শুরু করি।
যদিও কাজটি সহজ
ছিলনা। খুব শীঘ্রই
কাজটি শুরু করার
আরেকটি কারন ছিল,
মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে
জাতির ইতিহাস জানা।
ইউটিউব চ্যানলে এইসব
ভিডিও আপলোড করার
একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ব্যাপকভাবে দর্শক
শ্রোতাদের মাঝে
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
ছড়িয়ে দেয়া এবং
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
উজ্জীবিত করা।
বেতার অনুষ্ঠানের একটি সীমাবদ্ধতা আছে,
একবার সেটি প্রচার
হলে, আবার কবে
সেটি প্রচার হবে
তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আবার
কবে সেটি হবে
তাও জানার উপায়
থাকেনা। পক্ষান্তরে ইউটিউব চ্যানেলে থাকলে
যে কেউ যে
কোন সময় এই
ভিডিওটি দেখে
নিতে পারবে। কেউ
কেউ তার গবেষণায়ও কাজে লাগাতে পারবে।
এ পর্যন্ত পচাশি (৮৫) জন
বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার রংপুর বেতারের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড
করা হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহনের জন্য
প্রথমে একটি প্রশ্নমালা ঠিক করা হয়।
এক্ষেত্রে আমি
সহায়তা নেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বাংলাদেশ বেতারের সাবেক
পরিচালক বিশিষ্ট উপস্থাপক জনার
আশরাফুল আলম
স্যার এর কাছ
থেকে। প্রায় ত্রিশটি প্রশ্নসংবলিত এই
প্রশ্নমালা সাক্ষাৎকার গ্রহনকারীকে বুঝিয়ে
দেয়া হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহনকারী বেশির
ভাগ জনই হচ্ছেন
বেতারের নিজস্ব
শিল্পী এবং উপস্থাপনা বিভাগের সাথে
জড়িত ঘোষক-ঘোষিকাবৃন্দ। আর সাক্ষাৎকার দাতা
অধিকাংশ বীরমুক্তিযুদ্ধাগন ৬ নম্বর
সেক্টরে যুদ্ধ
করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এইসব
অনুষ্ঠানের অডিও,
ভিডিও, সম্পাদনা, প্রযোজনা, তত্তাবধানে অনেকের
ভুমিকা অসামান্য। স্বল্প
পরিসরে সবার নাম
উল্লেখ করছিনা তবে
এই মহত্তম কাজে
যারা জড়িত ছিলেন
বা জড়িত আছেন
তাদের সকলের প্রতি
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
লেখক:
ড. মোহাম্মদ
হারুন অর রশিদ
আঞ্চলিক
পরিচালক
বাংলাদেশ
বেতার, সিলেট।
৩০ মে ২০২৪
Mohammad Harun Or Rashid এর ফেসবুক টাইম লাইনের পোস্ট থেকে সংগৃহীত
(৩০ মে ২০২৪, ১৮:০১)