সিলেট খাদিমনগর হর্টিকালচার সেন্টার প্রশিক্ষণ হলরুমে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণটি বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) শেষ হয়। ক্যাটাগরী-০১: ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র হ্রাসকরণ’ প্রকল্পের আওতায় “মাশরুম চাষাবাদ”; ক্যাটাগরী-০২: 'মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ' প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে “মসলা ফসল চাষাবাদ” এবং ক্যাটাগরী-০৩: বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় “বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন প্রযুক্তি” শীর্ষক প্রশিক্ষণে প্রতিটি ক্যাটাগরীতে ৩০ জন করে মোট ৯০ জন কৃষাণ/কৃষাণী ও কৃষি উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। বেতার শ্রোতা সংগঠন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ দিদারুল আলম (দিদারুল ইকবাল) “মসলা ফসল চাষাবাদ” মায়মুন জাহান (তাছলিমা আক্তার লিমা) “বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন প্রযুক্তি” এবং সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)- সিলেট শাহপরান ইউনিট থেকে মো. আফজল চৌধুরী ও মো. আব্দুল বারী “বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন প্রযুক্তি” বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার মাশরুম প্রশিক্ষণে কিভাবে অল্প পরিসরে স্বল্প জায়গাতেই চাষ করে সহজে লাভবান হওয়া যায়, মাশরুমের গুনাগুন সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের মধ্যে কিভাবে ইতিবাচক ধারণা তৈরী করা যায় এবং অনেক বেকার তরুণ ও যুবকেরা মাশরুম চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন তা নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
মসলা হলো ভেষজ খাবার। খাবারের স্বাদ বাড়াতে মসলা অতুলনীয়। ফলে যেকোন খাবার তৈরিতে মসলার গুরুত্ব অপরিসীম। মসলা খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয় মসলাতে থাকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা মানবদেহের জন্য খুবই কার্যকর। আলোচকবৃন্দরা দৈনন্দিন ব্যবহার্য মসলা যেমন পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ, কালোজিরা, মৌরী, বিলাতি ধনিয়া, গোলমরিচ, তেজপাতা, দারুচিনি, জিরা, চুইঝাল, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্নরকমের মসলাজাতীয় ফসল কত সহজে উৎপাদন করতে পারেন ও এসবের উপকারী দিক তুলে ধরে প্রযুক্তির ব্যবহার করে কিভাবে বীজ সংরক্ষণ এবং মসলা চাষ করে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের শিক্ষা দেন। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত জাতের মসলা চাষে কৃষক ও কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধ করেন।
“বসতবাড়িতে ফল উৎপাদন প্রযুক্তি” প্রশিক্ষণে কৃষক কৃষাণীদেরকে হাতে-কলমে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন, ফল গাছ রোপন, পরিচর্যা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসম্মত ফল উৎপাদন প্রযুক্তি, ফলের সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
প্রশিক্ষণে কৃষির আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, বালাইনাশকের সঠিক ব্যবহার, ফল ও সবজি ফসলের রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা, উচ্চ মূলের ফসল চাষ ও উদ্যান ফসলের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরী, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ ও মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুপারিশ অনুযায়ী সার প্রদান, ফসলের অত্যবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনীয়তা, অভাব জনিত লক্ষণ ও প্রতিকার, বিভিন্ন মোবাইল এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি ও ফল উৎপাদন কৌশল, কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের কার্যক্রম জোরদারে করনীয় বিষয়সমূহের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
সিলেট খাদিমনগর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. রকিবুল ইসলাম রুমন বলেন, বাংলাদেশকে প্রতিটি বিষয়ে আমদানি নির্ভর না করে মাশরুম, মসলা ও ফল চাষে উন্নত জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে পুষ্টি ও ভেষজগুণে স্বয়ংসম্পূর্ণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন, খাদিমনগর হর্টিকালচার সেন্টারের মিশন হচ্ছে, দক্ষ, ফলপ্রসু, এলাকানির্ভর, চাহিদাভিত্ত্বিক এবং সমন্বিত কৃষি সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর কৃষকদের প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, যাতে টেকসই ও লাভজনক উদ্যান ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্বিতকরণসহ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
প্রশিক্ষণে কৃষক কৃষাণীদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষের চারা প্রদান করা হয়।