“শ্রোতারাই বেতারের প্রাণ। তাদের চাহিদাকে মাথায় রেখেই তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বেতার কাজ করে যাচ্ছে।” : তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা
দেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ ময়মনসিংহে প্রথমবারের মতো বেতার শ্রোতাদের নিয়ে শ্রোতা আনন্দমেলা তথা শ্রোতা সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বেতার, ময়মনসিংহ।
রবিবার (২৫ মে ২০২৫) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের চাষী ভবন মিলনায়তনে এই “শ্রোতা আনন্দমেলা ২০২৫” অনুষ্ঠিত হয়েছে। ময়মনসিংহ বেতার কেন্দ্রের আঞ্চালিক পরিচালক মো. আল আমিন খান (হিমেল) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বেতার ময়মনসিংহকে এই অঞ্চলে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে এই বেতার কেন্দ্রটি অল্প সময়ে শ্রোতাদের চাহিদা পূরণে এবং সময়োপযোগী নতুন নতুন অনুষ্ঠান প্রচারে এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শ্রোতাদের মন জয় করতে পেরেছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।” ময়মনসিংহ অঞ্চলের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতার ময়মনসিংহকে শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরে তথ্যসচিব আরো বলেন, “শ্রোতারাই বেতারের প্রাণ। তাদের চাহিদাকে মাথায় রেখেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বেতারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।” বক্তব্যের শেষে তিনি বেতারের কর্মকর্তা-কর্মী, শিল্পী-কলাকুশলী, শ্রোতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সকলকে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একসাথে কাজ কারার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বেতার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সাবেক পরিচালক ও সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মির শাহ আলম।
শ্রোতা প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল (S21DAL)। তিনি বাংলাদেশ বেতার ময়মনসিংহের তত্ত্বাবধানে শ্রোতাক্লাব নিবন্ধন ও ডাটাবেজ তৈরী, শ্রোতাদের একক ডাটাবেজ তৈরী, শ্রোতাক্লাবের কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে যথাযথ মূল্যায়ন, শ্রোতাক্লাবের বিভিন্ন আয়োজনের স্বচিত্র প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ ইত্যাদি বিষয়ে মতামত দেন। এছাড়া তিনি বেতারের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হ্যালো ময়মনসিং, কৃষি অনুষ্ঠান- কৃষির কথা, হারানো দিনের গানের অনুষ্ঠান- সোনালী সূর, পূর্বাশা অনুষ্ঠানের উচ্চ প্রশংসা করেন এবং বেতারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানান।
শ্রোতাদের মধ্যে আরো অনুভূতি প্রকাশ করেন, শাহাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মামুন, কবি তাছাদ্দুক হোসেন, মো. শরীফ উদ্দিন, বিপ্লব খান এবং জান্নাতুন নাহার নুপুর।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বেতারের আঞ্চালিক পরিচালক মো. আল আমিন খান (হিমেল) শ্রোতাদের প্রস্তাবিত মতামতগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ বেতারের আওতায় সক্রিয় শ্রোতাক্লাব গুলোকে নিবন্ধন দেওয়া, বেতার কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ও সহযোগিতা করা, বেতার থেকে নিবন্ধিত শ্রোতাক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পরিচয়পত্র প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কেউ যাতে বেতার থেকে প্রদানকৃত পরিচয়পত্রের অপব্যবহার না করেন সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়। এছাড়া নিবন্ধিত কোন শ্রোতাক্লাব যদি কার্যক্রমবিহীন হয়ে থাকে সেইসকল ক্লাবের নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলেও তিনি জানান। আল আমিন খান (হিমেল) শ্রোতাদের সাথে নিয়ে ময়মনসিংহ বেতারকে বাংলাদেশের অন্যতম একটি শ্রোতাবান্ধব বেতার কেন্দ্রের মডেল হিসেবে রূপ দিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন, সজীব দত্ত ও রাফিয়া ইসলাম ভাবনা।
মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এনায়েত কবির ও স্বর্না চাকলাদার পরিবেশন করেন, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় রম্য- ভাইসাব হগলে আইসুইন কিতা খাইসুইন…। এরপর আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন, মো. নজরুল ইসলাম। দলীয় পারফরমেন্স (অভিনয়) করে দর্শকদের নজর কেড়েছেন হ্যালো ময়মনসিংহ টিম ও সহযোগীরা। ছিলো কমেডি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান- হঠাৎ সেলিব্রিটি, এরপর একে একে গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন, শিল্পী লিমা আক্তার, অর্পিতা দেব প্রাপ্তি, সাদিয়া শারমিন, অনুক কুমার রায়, নাহিদা ইসলাম, আদিশ্রী সাহা ও প্রণব হালদার প্রান্ত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন, খন্দকার নুজহাত তাবাসসুম, আসাদুজ্জামান রুবেল, আখি আকবর রণি, সুব্রত কুমার সিংহ, মাশরিকি খান মাহিন, কথা আক্তার, সায়িম আহমেদ, রাফিয়া ইসলাম ভাবনা, এনায়েত কবির ও স্বর্না চাকলাদার।
অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিলো উপস্থিত কুইজ। বেতার সংক্রান্ত উন্মুক্ত কুইজে সবার আগে সঠিক উত্তর দিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচ জন শ্রোতা। তবে পুরস্কার গ্রহণের পূর্বে তাদের ৫টি বিষয়ের উপর যেমন, গরু বিক্রেতা, মলম বিক্রেতা, বাসের হেল্পার, রোগী ও চাপাবাজ দোকানদারের অভিনয় করে দর্শকদের দেখাতে হয়।
এছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সর্বশেষ আকর্ষণ ছিলো র্যাফেল ড্র। এখানে লটারীর মাধ্যমে ৫ জন ভাগ্যবান শ্রোতোকে মোবাইল সেট উপহার দেওয়া হয়। এখানে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল (S21DAL), মো. মশিউর রহমান সহ আরো তিন জন মোবাইল সেট পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ বেতার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সাবেক পরিচালক ও সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মির শাহ আলম বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বেতার ময়মনসিংহ কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ, উপবার্তা নিয়ন্ত্রক জিন্নাত আরজু মুক্তা, উপ আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ রাফিউল করিম ও মো. জাকিরুল ইসলাম, উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) মো. মামুনুর রহমান, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক মো. আশেকুল ইসলাম খান, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) মো. রবিউল আউয়াল মারুফ, আমন্ত্রিত অবজারভার শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল (S21DAL), বেতারের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। এছাড়া শ্রোতা সম্মেলনে জামালপুরের এইচ এম রোকনুজ্জামান রোকন, ময়মনসিংহের মো. মশিউর রহমান, আব্দুল কাদের ফকির, উজ্জ্বল চন্দ্র দাস, এস অতীশ চন্দ্র বর্মন, শামসুদ্দীন সুমন, জুবায়ের আল ফাহাদ, মো. আজাহারুল হক, সিরাজুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল পাশা, টাঙ্গাইলের রকিবুল হাসান সুমন, গাজীপুরের শাহীন আলম, কিশোরগঞ্জের এইচ এম মামুন সহ ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলা – ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা ও জামালপুরের শ্রোতাবৃন্দ এবং কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় দুই শতাধিক শ্রোতা অংশগ্রহণ করেন।
বার্তা প্রেরক,
মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী
প্রচার সম্পাদক
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment