তারিখ: ০৪/০৭/২০০৯
জন্ম নিবন্ধন মানুষের পরিচয়ের প্রাথমিক সনদ-
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব ।। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা.আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন গ্রাম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করবে। জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আনা হবে ব্যাপক পরিবর্তন। প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জন্ম নিবন্ধন মানুষের পরিচয়ের প্রাথমিক সনদ। বিদেশে শিশু জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট দেয়। পরে তা নাগরিক সনদ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে খুব কমসংখ্যক শিশু হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জন্ম গ্রহণ করে। তাদের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জন্ম নিবন্ধনের সনদ দেয়া গেলে এ কাজ অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে।
“জন্ম নিবন্ধন-সবার প্রয়োজন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ৩ জুলাই জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস ২০০৯ উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মঞ্জুর হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির ভাষণ রাখেন প্রধানমন্ত্রীর (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ন সচিব) আ.ক.ম.সাইফুল ইসলাম চৌধুরী এবং ইউনিসেফ-র বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ক্যারেল ডি রয়।
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক বিরাট ভূমিকা পালন করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব। সারাদেশে ১ লাখ ২০ হাজার টিকা কেন্দ্র ও ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ছাড়াও সকল হাসপাতাল, অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে ২০১০ সালের ৩০ জুনের প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে সার্বজনীন জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি সার্বজনীন জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। মন্ত্রী আরো জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের কাজে জন্মনিবন্ধনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সার্বজনীন জন্মনিবন্ধন কাজে স্থানীয় সরকার বিভাগকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো কিভাবে সহযোগিতা দেয়া যায় সে বিষয়ে শিগগিরই আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
বিশেষ অতিথির ভাষণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভাবে সচেতনতা সৃষ্টির আহবান জানান।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ন সচিব) আ.ক.ম.সাইফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মার্চ ২০০৯ পর্যন্ত দেশের ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষকে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর সহায়তায় এ যাবত সকল সিটি কর্পোরেশনে, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে ও ৮২১টি ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার সর্বরাহ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জন্ম নিবন্ধন প্রকল্পকে অচিরেই ১০০০টি ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রদান করবে। যার মধ্যে ৯০০টি ইউনিয়ন পরিষদে এবং ১০০টি পৌরসভায় প্রদান করা হবে। প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হচ্ছে এ-৪ সাইজের চেয়ে কিছুটা ছোট কাগজে। যেগুলি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে বড় আকারের কাগজী সনদের পরিবর্তে মেশিন রীডএ্যাবল প্লাস্টিক কার্ডে জন্ম সনদ প্রদানের চিন্তা ভাবনা করছে। মেশিন রীডএ্যাবল প্লাস্টিক কার্ডে জন্ম সনদ অনায়াসে একজীবনের বেশীকাল টিকে থাকবে। তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষের জন্ম সনদ প্লাস্টিক কার্ডে প্রদানের চিন্তা মূলত: একটি ব্যয়বহুল উদ্যোগ হওয়ায় রাষ্ট্রীয় অনুমোদন পাওয়া গেলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে আগ্রহী বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে প্রায় নিখরচায় সর্বসাধারণের জন্য সহজে বহনযোগ্য জন্ম সনদ প্রদান করা যাবে। তিনি আরো বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনানুসারে ২০০৮ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত সকল জন্ম ও মৃত্যু বিনা ফিসে নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। প্রচলিত বিধি বিধানানুসারে ৩ জুলাই ২০০৮ থেকে সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিলম্বিত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে একজন মানুষের বয়সের প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায় প্রতি বছরের জন্য ৫ টাকা করে ফিস প্রদেয় ছিল। কিন্তু সরকার সদয় হয়ে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই থেকে ২০১০ এর ৩০ জুন পর্যন্ত শহর গ্রাম নির্বিশেষে সর্বত্র অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সীদের জন্ম নিবন্ধন বিনা ফিসে এবং তদধিক বয়সীদের জন্য মাত্র ৫০ টাকা ফিস নির্ধারণ করেছে। যাঁরা এখনো জন্ম নিবন্ধন করেননি তাঁদেরকে সরকার প্রদত্ত স্বল্প ফিসের এ সুযোগ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি মনোজ্ঞ চাঁপাই গম্ভীরা পরিবেশন করা হয়। এর আগে সকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগর ভবন থেকে শুরু হয়ে গুলিস্তান ও পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।
জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস ২০০৯ উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা সহ আলোচনা সভা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমের সাথে জড়িত প্ল্যান বাংলাদেশ, এএসডি, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, পদক্ষেপ, সোনার বাংলা, নারী মৈত্রী, সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং সংগঠনের কর্মকর্তা/কর্মীবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেছে।
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব থেকে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক দিদারুল ইকবাল, ঢাকা শাখার সভাপতি তাছলিমা আক্তার লিমা এবং নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম এতে অংশ গ্রহণ করেন।
No comments:
Post a Comment