(পটভূমিতে সঙ্গীত: “যদি
রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই”)
কী নিষ্ঠুর, কী ভয়ঙ্কর-
সেই রাত। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অশ্রুভেজা ও কলঙ্কময় রাত। ১৯৭৫ সালের
১৫ আগস্ট রাতের কথা। যে রাতে স্ত্রী-সন্তানসহ সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন
বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান।
বছর ঘুরে রক্তের কালিতে
লেখা সে দিন-রাত আবার ফিরে এসেছে। আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতার ৪১তম
শাহাদাত বার্ষিকী।
দিবসটি উপলক্ষে
রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী
দিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে
বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করেছিলো সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল
সদস্য। ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ৬৭৭ নম্বর
বাড়ীতে শাহাদাতবরণ করেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার
স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দেশীয় কিছু রাজনীতিকের
পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের সেই কালো রাতে
আত্নীয়-পরিজনসহ নির্মম হত্যাণ্ডে শহীদ হন জাতির জনক। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার
হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ
কামাল, শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ১০ বছরের
শিশুপুত্র শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ
বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরও ২৮ সদস্য। তবে প্রবাসে থাকায় সে দিন প্রাণে বেঁচে যান
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ
রেহানা।
একইদিন ঘাতকের নির্মম
বুলেটে আরো প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্ত:সত্ত্বা
স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ
সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, নিকটাত্নীয় শহীদ সেরনিয়াবাত,
আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত
নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও
কর্মচারী।
যে লক্ষ্য ও আদর্শকে
সামনে রেখে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেই স্বপ্ন সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেওয়ার
উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয়েছিলো ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি। ঘাতকদের লক্ষ্য ছিল শুধু
বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশটাকেই ধ্বংস করে দেয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে
থামিয়ে দেয়া।
কিন্তু বাংলাদেশের
অগ্রযাত্রা থেমেছে কি? আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এম.পি’র সাথে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এম.পি’র সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন
দিদারুল ইকবাল। -ছবি: মো:চাঁন মিয়া
সিলেট হাফিজ কমপ্লেক্সে অর্থমন্ত্রী’র সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে করমর্দন করছেন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, সিলেট জেলা
শাখার সভাপতি মো: চাঁন মিয়া।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ ছিলো সরকারি ছুটি। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ ছিলো সরকারি ছুটি। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকালে রাষ্ট্রপতি মো:
আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু
স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ
সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করে ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতীয়
শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকা থেকে গোপলগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে
পৌছেঁ তিনি জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ফাতেহা পাঠ,
কবর জিয়ারত ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল জাতির পিতাকে
রাষ্ট্রীয় সালাম এবং প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে
সারা দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে
বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। দুপুরে অস্বচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য
বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং
সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ
অনুষ্ঠান প্রচার করে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা, বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রামাণ্যচিত্র
প্রদর্শন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কবিতা পাঠ, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা,
স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এছাড়াও আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন
রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন
করে।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে
অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু এদেশের স্বাধীনতার স্থপতিই
ছিলেন না, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই তার ভূমিকা
ছিল ঐতিহাসিক। এই মহানায়কের জন্ম না হলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা
উঁচু করে দাঁড়াতে পারত না।
বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী
এমন এক বীরের নাম, যিনি জীবনের শেষক্ষণেও ছিলেন দৃঢ়চেতা। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
মৃত্যু ঘটে একজন মহান জাতীয়তাবাদী নেতার। যিনি তার জাতিসত্তা বাঙালিত্বের চেতনায়
এই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে জাগ্রত করেছিলেন। আজীবন লড়াই করেছেন
প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। সংগ্রাম করেছেন একটি
সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। দেশের
মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। বাংলার মানুষের
অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে স্বদেশের মাটি
আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হওয়ার
নয়। তাই আজো মানুষ স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকে।
দিদারুল ইকবাল
চীন আন্তর্জাতিক বেতার
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment