** Scroll> 1] "CRI's Excellent Audiences' Club Award 2013". Won by CRI- South Asia Radio Club Bangladesh From China Radio International (CRI), Beijing, China. [2] সিআরআই থেকে ২০১১ সালের শ্রেষ্ঠ শ্রোতাসংঘ পুরস্কার পেয়েছে- “সিআরআই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব”। ১১ই মার্চ ২০১২ তারিখ রবিবার চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগ থেকে প্রচারিত “জীবন গানের দক্ষিণ এশিয়া” পর্বে শ্রোতাদের চিঠি পত্রের জবাবের অনুষ্ঠান “মুখোমুখি”তে এ ঘোষণা করেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ ছাই ইউয়ে মুক্তা। শ্রেষ্ঠ শ্রোতাসংঘের পুরস্কার পেয়ে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। >>> দিদারুল ইকবাল, পরিচালক, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, ঢাকা, বাংলাদেশ

Sunday, February 12, 2017

Radio is my Heart, Life, everything : 6th World Radio Day 2017 - Radio is you!

৬ষ্ঠ বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৭ : তুমিই বেতার
বেতারের সাথে আমি - দিদারুল ইকবাল

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের অগ্রযাত্রায় প্রায় মানুষের ধারণা রেডিও এখন সেকেলে, রেডিও-র দিন শেষ, এখন এর কোন মূল্য নেই! তাদের ধারণাটি আসলে কতটুকু সত্য বা সঠিক? এখন সময় বদলেছে ঠিকই, এই সময়ের সাথে পাল্লা দিতে বেতারের প্রচার ধরণও আংশিক বদলে গেছে তবে পূর্বের ধরণটি একবারে বাদ দিয়ে নয়। রেডিও-র অনুষ্ঠান আগে শুধু রেডিওতে শোনা যোতো, কিন্তু এখন রেডিও-র অনুষ্ঠান ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে শুনা যায়, মোবাইলে শুনা যায় এবং সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকেও রয়েছে বেতারের কার্যক্রম। কাজেই বেতারের গুরুত্ব কমেছে এই ধারণাটি একেবারে ভুল, ভিত্তিহীন। পৃথিবীর কোটি মানুষ এখনও রেডিও শোনে, রেডিও-র ওপর নির্ভর করে, রেডিও-কে বন্ধু হিসেবে ভাবে। তাই বেতারের জনপ্রিয়তা, প্রয়োজনিয়তা বা গুরুত্ব এখনো কমেনি। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রসার ও সহজলভ্যতার ফলে সম্প্রচার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিযোগিতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গ্রাম-গঞ্জে, দুর্গম এলাকা, নদী-সমুদ্র সবখানে এখনও তথ্য আদান-প্রদানে রেডিও একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত “৬ষ্ঠ বিশ্ব বেতার দিবস”। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ বেতার, আন্তর্জাতিক রেডি, প্রাইভেট এফএম রেডিও, কামিউনিটি এফএম রেডিও এবং বেতারের সাথে সম্পৃক্ত শ্রোতা ও শ্রোতা ক্লাবের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে রেডিও স্টেশনগুলোর পাশাপাশি বেতার শ্রোতা ও শ্রোতাক্লাব গুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এবছর ৬ষ্ঠ বেতার দিবসের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে “তুমিই বেতার - রেডিও ইজ ইউ” অর্থা আমিই রেডিও। এই রেডিও আমার জীবনে শিরা-উপশিরা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে, আষ্টেপৃষ্ঠে কিভাবে জড়িয়ে আছে তার কিছু স্মৃতিচারণ এখানে তুলে ধরলাম।
Model: Labib Iqbal
বেতারের সাথে প্রথম অনুভূতি এবং চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা :
আজকের এই সময় হয়ত আমি পুরপুরি দিন-ক্ষণ সঠিক ভাবে বলতে পারবোনা, তবে এইটুকু অনুমান করে বলতে পারি আমার বয়স তখন ৪ কি ৫ বছর হবে। বাবার এক ব্যান্ডের একটি সাদা রঙের ছোট্ট রেডিও ছিলো, যা নিয়ে আমি প্রায়ই প্রতিদিন গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে গান শুনতে শুনতে ছোট বোনের সাথে খেলাধূলা করতাম। তখন রেডিও’র গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না আমার। তবে ঐ সময় যে রেডিও শুনে বেশ আনন্দ পেতাম এটা বেশ স্মরণে আছে। এমন কি বড় ফুফুর বাড়ীতে বেড়াতে গেলেও সেখানে রেডিও নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। তখনকার সে বয়সে অন্যরকম কৌতুহল ছিল কিভাবে রেডিও’র ভেতরে মানুষ কথা বলে? ভেতরে কথা বলার লোক গুলিকে কেন দেখা যায় না? এবং বড় বড় মানুষ গুলি এই ছোট্ট রেডিও-টির ভেতরে কিভাবে ঢুকে পড়লো কিংবা তাঁরা সেখানে বসে আছে নাকি দাড়িয়ে আছে? এরকম আরো কত না প্রশ্ন মাথায় ঘুরে বেড়াতো, অথচ কোনোটির উত্তর খুঁজে পাওয়া যেতোনা। এর পরেও মধুর অনুভূতি নিয়ে থাকতাম সারাবেলা। পড়াশুনার পাশাপাশি জেঠাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, মামাতো ভাইদের সাথে বিভিন্ন সময়ে রেডিও-তে নানা ধরনের অনুষ্ঠান শুনতাম এবং ক্রমান্নয়ে বেতারের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকি। একসময় জানতে পারি বা বুঝতে পারি বাংলাদেশ বেতারের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও অন্যান্য অনুরোধের আসরে শ্রোতাদের অনুরোধে অর্থা কেউ রেডিও-তে নিজের পছন্দের গান শুনতে চাইলে তা চিঠি লিখে পাঠালে বেতার থেকে তা কোন না কোন অনুষ্ঠানে প্রচার করবে বা শুনাবে। সে সময় বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক অঞ্চলের শ্রোতার নাম শুনতাম, তাদের পছন্দের গান কিংবা চিঠির জবাব শুনতাম। কিন্তু কারো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না বা তাদের কাউকে চিনতাম না। রেডিও-তে শ্রোতাদের নাম যখন শুনতাম তখন মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি তৈরী হতো, মনে মনে ভাবতাম, ইশ তাঁরা কতইনা ভাগ্যবান! তাঁদের মতো আমার নামটিও যদি এভাবে রেডিও-তে শুনা যেতো? আমার আত্নীয়-স্বজনরাও যদি আমার নামটি রেডিও-তে শুনতে পেতো, তবে কতইনা মজা হতো!!! কিন্তু, কিভাবে তা করা সম্ভব আমি কিছুই জানতাম না। তবে, মনে মনে ভাবতাম তাঁরা হয়ত আমার চেয়ে বয়সে অনেক অনেক বড়, সকলে উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁদের পরিবার বা আত্নীয়-স্বজনদের মধ্যে কেউ না কেউ রেডিও-তে চাকুরী করে। ফলে শুধুমাত্র তাঁরা রেডিও-তে চিঠি লিখতে পারে বা গানের অনুরোধ করতে পারে। বেতারে কিভাবে চিঠি লিখতে হয় বা কিভাবে অনুরোধ করতে হয় সে সম্পর্কে আমার কোন অভিজ্ঞতা বা ধারণা ছিলোনা তখন। কিন্তু বেতারে চিঠি লেখার আগ্রহটা ছিলো বেশ প্রবল। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়ে উঠেনা। একদিন সাহস করেই বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে একটি চিঠি লিখে ফেলি অনুরোধের আসরে। চিঠির নিচে ইতি-তে আমার চাচাতো ভাই-বোন, মামাতো ভাই-বোন, খালাতো ভাই-বোন, ফুফাতো ভাই-বোন, আমার বোনদের নাম সহ কম করে হলেও ১৫ থেকে ২০ জনের নাম লিখলাম এবং কৌশলে আমার নামটি দিলাম মাঝামাঝিতে। চিঠির শেষাংশে ইতির অংশে আমার নামটি মাঝামাঝিতে লেখার অন্যতম কারণ ছিল বা কৌশল ছিলো যেহেতু রেডিও-তে আমার চিঠি লেখার পূর্ব প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা বা নিয়মাবলী জানা ছিলোনা তাই চিঠির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে কোন স্থানে ভুল হতে পারে, সম্ভাষণ কিংবা বানানেও। আর লেখায় যদি ভুল হয় তবে নিশ্চয় বেতারের লোকজন ঐ চিঠির ইতি-তে যাদের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে যার নাম শুরুতে রয়েছে তাকেই বকাঝকা, অপমান কিংবা তিরস্কার করবে এই ভেবে যে, যার নাম প্রথমে রয়েছে নিশ্চয় সে চিঠিটি লিখেছে। কাজেই, চিঠিটি যে মূলত আমি লিখেছি তা বেতারের লোকজন কোন ভাবেই বুঝতে পারবেনা। আমার পরিচয়ও তাঁরা জানতে পারবেনা। যাইহোক, চিঠি পাঠানোর পর আমি অপেক্ষা করতে থাকি কখন তার উত্তর পাবো সে আশায়। অবশেষে একদিন অপেক্ষার হলো অবসান। যদিও এখন সেদিনকার সঠিক তারিখ ক্ষণ মনে নেই, তবে যেদিন বাংলাদেশ বেতারে প্রথম নিজেদের নাম এবং আমাদের বাড়ীর ঠিকানা শুনতে পেলাম তখন মনের ভেতর কি-যে অনুভূতি হয়েছিলো, আনন্দ পেয়েছিলাম তা লেখার ভাষায় সেই আবেগ প্রকাশ করা যাবেনা, শুধু কল্পনা করা যায়। আজো রেডিও-তে নিজের নামটি শুনতে পেলে সেই একি আনন্দে মনটি ভরে যায়। কিন্তু শৈশবে বেতার নিয়ে ঐ ধরনের বোকা বোকা চিন্তার কথা এখন মাঝে মাঝে মনে পড়লে বেশ হাসি পায়, মনে মনে ভাবি সে সময় কতই না বোকা ছিলাম। এতো গেল শৈশবে বেতারকে নিয়ে মজার বোকা বোকা চিন্তা বা স্মৃতির কথা।

ভয়াল ২৯শে এপ্রিল ১৯৯১ বনাম রেডিও’র গুরুত্ব :
সত্যিকার অর্থে রেডিও’র গুরুত্ব কি? বিনোদনের পাশাপাশি রেডিও মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কি ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, কিভাবে পাল্টে দিতে পারে মানুষের জীবন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে রেডিও কিভাবে প্রাণ বাঁচাতে পারে সে সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাই ছিলনা আমার। এ সম্পর্কে আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারি আরো পরে। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা অর্থা একটি রেডিও আমার জীবনকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেয়। বদলে দেয় আমার সকল চিন্তা, ধ্যান ধারণাকে। যা বলছিলাম, ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল রাতে স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মহাবিপদ সম্পর্কে আনুমানিক রাত ১১টায় বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সতর্ক বার্তা শুনছিলাম আমার জেঠাতো ভাই মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (পিন্টু)’র তিন ব্যান্ডের রেডিও-তে। বিশেষ খবরের শেষ কথাটি ছিলো বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি এখন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল গুলিতে আঘাত হানছে। উপকূলীয় অঞ্চলের সকল জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। খবর শেষ হতে না হতেই আমি পানির ছলছল শব্দ শুনতে পেয়ে কৌতুহল বশত বারান্দায় শোয়ার খাটের নিচের দিকে তাকাতেই দেখি ঘরের ভেতরে সাগরের জলোচ্ছ্বাসের পানি ধেয়ে আসছে। তখন আমি জোয়ারের পানি আসছে বলে চিকার করতে থাকি। মুহুর্তের মধ্যে আমার মা, জেঠা, জেঠি মা, জেঠাতো ভাই অর্থা আমরা পরিবারের সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ি জীবন বাঁচাতে। আর ঐ সময় বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত বিশেষ আবহাওয়া বার্তাটি আমাকে প্রচন্ড ভাবে আলোড়িত করে। বলা যায় তখনি আমি রেডিও’র প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। যা আমার জীবনের একমাত্র বিশ্বস্ত সঙ্গী বা বিপদের বন্ধু হিসেবে স্থান করে নেয় হৃদয়ের গহীনে। কারণ, বেতারের সেই সতর্ক বার্তাটি সেদিন আমার পরিবার-পরিজন সকলের জীবন রক্ষার পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। কেননা, আমারা রেডিও-তে সর্বশেষ আবহাওয়া বার্তা শুনার পর মহা বিপদের কথা আঁচ করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সেই রেডিওটি পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে  নিয়ে এবং একটি টর্চ লাইট ও ১টি হাতুড়ি সাথে নিয়ে সকলে দ্রুত প্রথমে ঘরের চিলেকোঠায় বা দরমায় (সন্দ্বীপের আঞ্চলিক ভাষা) উঠে আশ্রয় গ্রহণ করি। এদিকে জলোচ্ছ্বাসের পানি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের আশ্রয় নেয়া চিলেকোঠাটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে আমরা ঘরের টিনের চালা থেকে হাতুড়ি দিয়ে টিন খুলে চিলেকোঠার ভেতর থেকে বের হয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে টিনের চালায় আশ্রয় নিই এবং নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। 
ভোরের দিকে জলোচ্ছ্বাসের পানি এবং ঝড় তুফানের গতি কমতে থাকে। আমরা তখনো বুঝতে পারিনি কতটা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করে জলোচ্ছ্বাসের পানি এবং ঝড় তুফান থামতে শুরু করেছে। ভোরের অন্ধকার কাটার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দেখতে পাই আমাদের বাড়ীর প্রতিটি ঘর, গাছ-পালা লণ্ডভণ্ড করে মরুভূমি বানিয়ে দিয়েছে এবং সেই সাথে কেড়ে নিয়ে গেছে প্রায় ১৫টি মানুষের প্রাণ। যাদের মৃত দেহ বিভিন্ন স্থানে আটকা পরে আছে। এদের মধ্যে ছিল নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক। সেই থেকে বেতারের সাথে আমার নিভিড় একটা সম্পর্ক বা ভালোবাসা গড়ে উঠে।
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য করতে হবে, আমার জেঠাতো ভাই মনিরুল ইসলাম (পিন্টু) ঐসময় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার রহমতপুর ইউনিয়নের ১নং ইউনিটের সংকেত প্রচার সদস্য (স্বেচ্ছাসেবক) ছিলেন। কাজের জন্য তার কাছে সরঞ্জাম হিসেবে ছিল লাল রঙের ৩টি বিপদ সংকেত পতাকা, ১টি হ্যান্ড মাইক, ১টি রেডিও সেট, ১টি টর্চ লাইট, বৃষ্টিতে গায়ের জন্য ১টি হলুদ রঙের রেইন কোর্ট, মাথায় পড়ার জন্য ১টি সাদা হেলমেট এবং পায়ে দেয়ার ১ জোড়া হলুদ রঙের গামবুট।
ঘটনার পূর্বের দিন অর্থা ২৮ থেকে ২৯ এপ্রিল রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমার জেঠাতো ভাই আমাদের রহমতপুর ইউনিয়নের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত পায়ে হেটে হেটে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগাম বিশেষ সতর্ক বার্তা প্রচার করাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে অথবা কাছাকাছি সাইক্লোন সেল্টারে/আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে মাইকিং করে আসছিলেন। সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেতের ঘোষণাটি ব্যাপকভাবে প্রচার করে আসলেও ঐ সময় অনেকেই তাতে কর্ণপাত করেনি, “এ আর এমন কি!” বলে উল্টো উপহাস করেছে। এমনকি সরকারী ভাবে বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন থেকেও ব্যাপক প্রচারনা চালালেও অনেকে সেটি গুরুত্ব দেয়নি। শুধুযে অন্যরা উপহাস করেছেন তা কিন্তু নয়, স্বয়ং আমাদের পরিবার-পরিজন ও বাড়ীর বড় ছোট প্রায় সকলে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত-কে পাত্তাই দেয়নি। এবং বাড়ীর কোন পরিবারই নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয়ে না যেয়ে বাড়ীতে নিজেদের ঘরেই থেকে যান। আমরা কেউ বিন্দুমাত্রও ভাবতে পারিনি আমাদের অসচেতনতা, নির্বুদ্ধিতা, দাম্ভিকতা ও ভুলের কারনে সেদিন আমাদের ভাগ্যে শতাব্দীর নিষ্ঠুর মহা প্রলয় ঘটতে যাচ্ছে! সকাল থেকে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত, প্রতি মূহুর্তে আবহাওয়া তার রূপ পাল্টাতে থাকে। রাত যত গভীর হচ্ছে প্রচণ্ড ঝড় ও তুফানের তীব্রতা তত বাড়তে থাকে। আমাদের ঘরের টিনের চালা একটি একটি করে তুফনের উড়িয়ে নিতে থাকে। ঘরে তখন আমি, মা আর আমার ছোট ৩ বোন। সবচেয়ে ছোট বোনটির বয়স তখন মাত্র ৬ মাস। আমি আর মা ছোট বোনদের নিয়ে চিকার করে সামনের ঘরের জেঠিমাদের ঠাকতে থাকি কিন্তু কেউ কারো শব্দ বা চিকার শুনতে পায়না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমরা প্রচণ্ড ঝড় ও তুফানের ভেতর দ্রুত আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে জেঠিমাদের ঘরে আশ্রয় নিই। সে এক বিভীষিকাময় মূহুর্ত! তখন সকলের মনের ভেতর সত্যি এক অচেনা ভয় চেপে ধরে।
পরে আমরা সকলে আমাদের ভুল বুঝতে পারি এবং নিরাপদ আশ্রয়ে চলে না যাওয়ায় আফসোস করতে থাকি। আমাদের মত অন্যরাও যারা উপহাস করেছিলেন তারাও অনুসূচনা করেন, কিন্তু ততক্ষনে সময় শেষ। আমরা সকলে জীবন বাঁচাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে চীকার করে ডাকতে থাকি। আমরা ছোট বড় সকলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলেও আমার ছোট বোন যার বয়স মাত্র ৬ মাস তার কোন সারা শব্দ আমরা পাচ্ছিলাম না। তবুও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখি। সত্যি সত্যি পরে দেখা গেল সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার বেগের তীব্র বাতাস এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু  সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের পানি রাতের অন্ধকারে মুহুর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে সন্দ্বীপ সহ অন্যান্য উপকূলীয় এলাকা। নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মানুষের স্বপ্ন, তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রাণহানি ঘটে লক্ষ মানুষের। সেই সাথে ভেসে যায় মানুষ, ঘরবাড়ী, সহায় সম্বল, গৃহপালিত পশুপাখি সবকিছু। সকালে আমরা ঘরের টিনের চালার উপর থেকে নেমে আসি এবং সকলে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমি অবশ্য সাথে রেডিওটি নিয়ে যেতে ভুলিনি। এদিকে রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে, গাছ-পালা ভেঙ্গে, মানুষের ঘরবাড়ী, বিভিন্ন আসবাবপত্র সবকিছু দুমড়ে মুছড়ে পথে পথে স্তুপ হয়ে আছে। শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেদিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। মানুষ তিনতলা সম উচ্চতার উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। লাশের পর লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। সন্দ্বীপের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এর আগে আর কখনো হয়নি সন্দ্বীপের মানুষ। ৩০ এপ্রিল সন্দ্বীপবাসীর মত বিশ্ববাসীও অবাক হয়েছে সেই ধ্বংসলীলা দেখে।
আমরা জানি পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর অধিকাংশই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, কিন্তু যে অল্প সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে তার একটি ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় “ম্যারি এন”। এখনো পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে এটিই অন্যতম।
যাইহোক, ব্যাপক ধ্বংসস্তুপের উপর দিয়ে আমরা আবারো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খালি পায়ে হেটে কোনমতে একটি সাইক্লোন শেল্টারে পৌঁছায়। সেখানে বারান্দায় কয়েকটি শিশুর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে বুকটা কেপে উঠলো, শিশু গুলির নাক ও কান দিয়ে পিঁপড়ে ডুকছে আর বের হচ্ছে। শেল্টারের ভেতরের অবস্থা এবং বিভিন্ন মানুষের স্বজন হারানোর আহাজারি দেখে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে সাইক্লোন শেল্টারের পাশে দিঘীর পাড়ে আশ্রয় নিই। সেখানে বসে রেডিওটি অন করে সংবাদ  ও আবহাওয়া পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করি। এবং সেই সাথে নিরাপদ পানি পান, নিরাপদ খাবার গ্রহণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ইত্যাদি সচেতনতামূলক বার্তা শুনতে থাকি বাংলাদেশ বেতার থেকে। এদিকে আমরা যেখানে অবস্থান নিয়েছি কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে বিভিন্ন দিক থেকে নৌকায় করে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবক, যুবতী, তরুণ, তরুণী ও শিশুদের মৃতদেহ বা লাশ আনা শুরু হয় এবং মুহুর্তের মধ্যে দিঘীরপাড় হাজারো লাশের স্তুপে ভরে যায়। বিভিন্ন বয়সের এতো লাশ দেখে আমরা স্তব্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে বেলা বাড়লেও আমার সেই ছোট্ট বোনটির কোন সারা শব্দ আমরা পাচ্ছিনা। সবাই তাকে কোলে নিয়ে নানা ভাবে চেষ্টা করে দেখেছে কিন্তু তার কোন সারা পাওয়া যাচ্ছেনা। তার শরীর সাদা হয়ে শক্ত হয়ে রয়েছে, হৃদস্পন্দনও বুঝা যাচ্ছেনা। আমরা সকলে ভয়ের মধ্যে ছিলাম। আমাদের পাশে আশ্রয় নেওয়া কেউ কেউ বলেছে “মরে গেছে” তাই দিঘীরপাড়ে যেখানে অন্য লাশ রাখা হয়েছে গণকবর দিতে সেখানে রেখে আসতে। কিন্তু আমরা তা করিনি। আমাদের বিশ্বাস ছিলো সে জীবিত আছে, আর আমি মনে মনে ভাবলাম যদি আমার বোনটি মরেও যায় আমি বা আমরা তাকে এখানে ফেলে যাবোনা। প্রয়োজনে তাকে আমরা কোন আত্নীয়ের বাড়ীতে নিয়ে কবর দেবো। বেলা প্রায় তিনটার দিকে আমরা আমার বড় খালার বাড়ীতে যায়। সেখানে আমার খালাতো বোন আমার ছোট বোনটিকে কোলে নেয়ার সাথে সাথে সে কান্না করে উঠে। আর আমরা সকলে আনন্দে হেসে উঠি। মনে হলো যেন গত রাতের তান্ডবে আমরা আমাদের বাড়ী-ঘর, সহায়সম্বল হারিয়ে যেভাবে সর্বশান্ত হয়েছিলাম সে দু:খ-কষ্ট মূহুর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো এবং সকলের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। আমার ছোট বোন জীবিত থাকার বিষয়টি তাক্ষনিক সবাইকে উফুল্ল করে তোলে, সবার আত্নায় যেন শান্তি ফিরে আসে। আমার সেই ছোট বোনটি এখন বিবাহিত, এক সন্তানের জননী। কাকতালীয় ভাবে হলেও সত্য ২০১৬ সালের সেই ২৯শে এপ্রিল আমার ঐ বোনটি একটি ফুটফুটে কন্য সন্তানের জন্মদেয়। যাকে ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল মৃত বলে অন্যান্য লাশের স্তুপের পাশে গণকবর দিতে রেখে দিতে বলেছিলো কেউ কেউ। সে বেদনাদায়ক স্মৃতির কথা আমি, আমরা আজো কেউ ভুলিনি, ভুলবোনা। সত্যিকথা বলতে কি সে দিন একমাত্র একটি রেডিও আমাদের পরিবারের সকলের জীবন বাঁচাতে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলো। আমি তখন থেকে চেষ্টা করতে থাকি কিভাবে বেতারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি তৃণমূল মানুষের কাছাকাছি পৌছে দেয়া যায়, মানুষকে সচেতন করা যায় এবং মানুষকে বেতারের অনুষ্ঠান শুনতে উদ্বুদ্ধ করা যায়।  
১৯৯১ সাল থেকে আমি বেতার-কে আকড়ে ধরি। জানার চেষ্টা করি এর মূলমন্ত্র। আমি তখন থেকে বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শোনা শুরু করলেও বেতার কার্যক্রমের সাথে আজ এভাবে নিজেই সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে যাবো বা বেতারের সাথে কাজ করবো এটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এমনকি এই রেডিও-যে আমার অন্যতম প্রধান শখ হয়ে উঠবে সেটাও আশা ছিলোনা। কিন্তু বর্তমানে বেতার কার্যক্রম এবং আমার মধ্যকার যে সম্পর্ক তা আমাকে সত্যি সত্যি বিস্মিত করে।

বেতারের প্রচারে শ্রোতাক্লাব গঠন এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
আমি সেই ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেতারের সাথেও যুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই), বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ), ডয়চে ভেলে (ডিডব্লিউ), রেডিও ভেরিতাস এশিয়া (আরভিএ), এনএইচকে ওয়ার্ল্ড রেডিও জাপান (আরজে), রেডিও তেহরান (আরটি), রেডিও সৌদিআরব, এ্যাডভেন্টিস্ট ওয়ার্ল্ড রেডিও (এডব্লিউআর) ইত্যাদি বাংলা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য ইংরেজী বিভাগে নিয়মিত চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়াতে চেষ্টা করি। ঐসময় আমার মত যারা বিভিন্ন বেতারে নিয়মিত চিঠিপত্র লিখে যোগাযোগ রাখতো এই ধরনের কোন শ্রোতার সাথে তখনো আমার সরাসরি পরিচয় বা সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। ১৯৯৭ সালে এসে আমার সাথে প্রথম পরিচয় হয় চট্টগ্রাম হাটহাজারী থানার ফতেয়াবাদের বেতার শ্রোতা এম. ফোরকানের সাথে। শুরু হয় আমাদের দু’জনের মধ্যে বেতার সখ্যতা। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক এমন পর্যায়ে তৈরী হয়েছে যে প্রতিদিনের আড্ডায় বিভিন্ন বেতারের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা না করলেই যেন আমাদের দু’জনের পেটের ভাত হজম হতোইনা। আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে এবং একে অপরের বাসায় আসা যাওয়া করতে থাকি। আমাদের সম্পর্ক যখন অনেক গভীরে তখন আমি একটি বেতার শ্রোতা সংগঠন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমার ইচ্ছার কথা বন্ধু ফোরকানের কাছে তুলে ধরি। সেও রাজি হয়। আমরা প্রথমে খুজে বের করি কাছাকাছি এলাকার ৪/৫ জন বেতার শ্রোতা বন্ধুকে। মনের মধ্যে কিছুটা জোড় পাই বেতার শ্রোতাক্লাব প্রতিষ্ঠার। এরপর আমরা দু’জনে চট্টগ্রামে অবস্থিত আরো যত বেতার শ্রোতা রয়েছে তাদের অনেকের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করি এবং তাদেরকেও আমাদের বেতার শ্রোতা সংঘ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাই। বিশ্ব ব্যাপী বেতারের গুরুত্ব, তার জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বুঝিয়ে দিতে সেই সাথে বেতারকে সু-সময় ও দুঃসময়ের একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চিহ্নিত করতে এবং আধুনিক যুগেও বেতারের গুরুত্ব তুলে ধরার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৯৭ সালের ১লা অক্টোবর সর্ব প্রথম বন্দর নগরীতে আমরা প্রতিষ্ঠা করি “ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসনার্স ক্লাব, চট্টগ্রাম”। শুরু হয় বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেতারের সাথে “শ্রোতাক্লাব সেতুবন্ধন”। প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের শ্রোতা সংগঠনের কর্যক্রম ছিলো শুধুমাত্র চট্টগ্রাম শহর ভিত্তিক। কিন্তু ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে ক্লাবের ব্যাপকতা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আমরা ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে রাখি “ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসনার্স ক্লাব বাংলাদেশ”। শুরু হয় ক্লাবের জেলা, থানা, ইউনিয়ন, গ্রাম, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক কার্যক্রম। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসনার্স ক্লাব বাংলাদেশ-এর শাখা প্রশাখার পরিধি। আমরা আমাদের ক্লাবের আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রোতাদের পাশাপাশি সমাজের নিন্মবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সকলের কাছাকাছি আমাদের সাংগঠনিক বার্তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি। ২০০৮ সালে আমরা আমাদের ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসনার্স ক্লাব বাংলাদেশ-এর নাম ও লোগো পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিই। যেহেতু এটি একটি বেতার শ্রোতা সংগঠন এবং শ্রোতারাই এই সংগঠনের প্রাণ তাই ২০০৮ সালের ০১লা জানুয়ারি আমরা বিশেষ এক জরিপের মাধ্যমে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ ও পছন্দের আনুপাতিক হার নির্ণয় করে নতুন নাম ও মনোগ্রাম নির্বাচন করি। যা আজ “সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)” নামে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে। বর্তমানে বাংলাদেশের ২১টি জেলায় আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর ৪৩টিরও বেশি শাখা ও অন্তর্ভুক্ত ক্লাব রয়েছে। যে সকল জেলায় সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর কার্যক্রম রয়েছে, যেমন- ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, শরীয়তপুর, শেরপুর, পাবনা, নেত্রকোণা, সিলেট, হবিগঞ্জ এবং সাতক্ষীরা। উল্লেখিত জেলা গুলির মধ্যে কোন কোন জেলায় একাধিক শাখা রয়েছে। প্রতিটি শাখা ক্লাব স্ব স্ব অঞ্চলের বেতার শ্রোতাদের সমন্বয়ে গঠিত এবং পরিচালিত হয়ে আসছে।
আমাদের “সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)”-এর পক্ষ থেকে আমরা সবসময় তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, নবীন-প্রবীন বিভিন্ন বয়স ও পেশার জনগণকে বেতার অনুষ্ঠান শুনতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি এবং সেই সাথে চেষ্টা করছি বেতারের শ্রোতা বাড়াতে।
আমাদের ক্লাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে,
১)     দলবদ্ধ হয়ে অথবা একক ভাবে বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শুনা, অন্যদের রেডিও সেট বা মোবাইলের এফ.এম এ্যাপসের মাধ্যমে অথবা ইন্টারনেটে বেতারের অনুষ্ঠান শুনতে উসাহিত করা।
২)     বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনে ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে গ্রুপ ভিত্তিক কিংবা মোবাইল কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা পর্যালোচনা করে অথবা একক ভাবে বেতারে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলির উপর নিয়মিত গঠণমূলক আলোচনা বা সমালোচনা, ভালো লাগা, প্রস্তাব ইত্যাদি বিষয়ে চিঠি লিখে বা ই-মেইলে, ফেইসবুক ফ্যান পেইজে কমেন্ট করে অথবা এসএমএস-এর মাধ্যমে  তথ্য দিয়ে বেতার কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা/অবগত করা। 
৩)    নতুন ও পুরাতন শ্রোতাদের বেতারে নিয়মিত গঠণমূলক চিঠিপত্র লেখার বিষয়ে উসাহিত করা।
৪)     নতুন শ্রোতাদের বেতারে চিঠিপত্র লেখার নিয়মাবলী সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নতুন নতুন ডিএক্সার সৃষ্টি করা এবং বেতারে নিয়মিত চিঠি লিখতে উদ্বোদ্ধ করা।
৫)     বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের সর্বত্র অঞ্চলভিত্তিক শ্রোতা জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতারের শ্রোতা সংখ্যা বাড়ানো।
৬)    বাঙ্গালীর অহঙ্কার মুক্তিযুদ্ধে বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের মাঝে তুলে ধরা।
৭)     বাংলাদেশ বেতার ও শ্রোতাদের মধ্যকার সার্বিক উন্নয়নে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মেলা, প্রদর্শনী, লোকজ মেলা, শ্রোতা সম্মেলনের আয়োজন করা।
৮)    বেতার ডিএক্সীং কর্মকান্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতিভা বিকাশ ও উন্নয়নে সাহায্য করা।
৯)    শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ব্যক্তিদের জীবনী ও তাদের সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা এবং সংবর্ধনা দেওয়া।
১০)    বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন কুইজ, রচনা, বই পড়া, কবিতা লেখা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং সৃজনশীল মেধা বিকাশের জন্য চিত্রাংকন, ক্রীড়া, সংগীত, নৃত্য, অভিনয় ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
১১)    বিভিন্ন দূর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে বাংলাদেশ বেতার থেকে পাওয়া সতর্ক সংবাদ শুনে শ্রোতা ক্লাবের উদ্যোগে জনসাধারণকে সচেতন ও সহযোগিতা করা।
১২)    সামাজিক ও বিভিন্ন মানবসেবা বা জনকল্যাণমূল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, যেমন- গণশিক্ষা, নারী ও শিশু শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সেবা, স্কাউটিং, বিভিন্ন দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করণ এবং সনদপত্র বিতরণে সহযোগিতা করা, বৃক্ষরোপন, গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম যেমন- এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ, এসিড নিক্ষেপ প্রতিরোধ, যৌতুক প্রথা প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম, ধূমপান ও মাদক, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, র‌্যালীর মাধ্যমে প্রচারাভিযান করে এলাকার জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এছাড়া শ্রোতাক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা, যেমন- বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন দিবস, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব শ্রমিক দিবস, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস, মানবাধিকার দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতীয় উসব পালন করা ইত্যাদি।
১৩)   শ্রোতাক্লাবের লক্ষ্য অর্জনে বুলেটিন, সাময়িকী, পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি প্রকাশ করা।

রেডিও শুনে বিশ্ব ভ্রমণ :
শুধু রেডিও শুনে রেডিও-র অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে বিভিন্ন সময়ে বহুমূল্যবান পুরস্কার পেয়েছি দেশ-বিদেশ থেকে। পেয়েছি বেতারের বিভিন্ন দূর্লব ও আকর্ষণীয় প্রমোশনাল আইটেম। কিন্তু রেডিও শুনে বা শ্রোতাক্লাব করে যে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করা যায় এটা ছিলো আমাদের কল্পনার বাইরে। আমরা দীর্ঘ বছর ধরে যেভাবে রেডিও-র পিছনে সময় ব্যয় করেছি, শ্রোতাক্লাব নিয়ে বেতারের সাথে সেতুবন্ধন তৈরী করার গবেষণায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছি তা যে আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য বয়ে আনবে আমরা তা গুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। কিন্তু কিভাবে যেন কি হয়ে গেল। যা ছিল আমাদের জন্য সত্যি মহা বিস্ময়কর। আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) ২০১২ এবং ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ভাবে ইন্দোনেশিয়া এবং চীন থেকে বেতার শ্রোতা ও শ্রোতাক্লাব গবেষণায় সর্বোচ্চ শ্রেণীর ৩টি পুরস্কার অর্জন করে ফেলে। আমরা সকলে হতবাক হয়ে যায়। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি বাংলাদেশে আমাদের ক্লাবই একমাত্র আন্তর্জাতিক অভিজাত শ্রেণীর (ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ড প্রাইজ) পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রোতা ক্লাব। শুধু তাই নয়, বিশ্বে যতগুলি দেশে বেতার শ্রোতা ক্লাব রয়েছে সেগুলির মধ্যেও এটিই এখনো পর্যন্ত একমাত্র রেকর্ড। এর পূর্বে বা এখনো পর্যন্ত কোন শ্রোতা ক্লাব এ স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
২০১২ সালে রেডিও রিপাবলিক অব ইন্দোনেশিয়া (আরআরআই) ওয়ার্ল্ড সার্ভিস- ভয়েস অব ইন্দোনেশিয়া (ভিওআই) এবং মিনিস্ট্রি অব ট্যুরিজম এন্ড ক্রিয়েটিভ ইকোনমি অব দ্যা রিপাবলিক অব ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক আয়োজিত “ওয়ান্ডারফুল ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কুইজ ২০১২” প্রতিযোগিতায় আমি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ড পুরস্কার বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ৮ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, বানদুং এবং বালী দ্বীপ ভ্রমণ করার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করি। সেখানের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আমার বেতার ও বেতার শ্রোতাক্লাব গবেষণা নিয়ে ইন্টারভিউ প্রচার ও আর্টিকেল প্রকাশ করে। যা ছিলো আমার জন্য মহা সম্মানের। একি বছর চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) কর্তৃক “মনোহর নারিকেল দ্বীপ হাইনান আন্তর্জাতিক পর্যটন দ্বীপ জ্ঞানযাচাই প্রতিযোগিতা ২০১২”-তেও আমি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ড পুরস্কার বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ৮ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত চীনের রাজধানী বেইজিং এবং নারিকেল দ্বীপ হাইনান প্রদেশ ভ্রমণ করার সাফল্য অর্জন করি।
২০১৩ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বিশ্বব্যাপী আয়োজন করে “সিআরআই শ্রেষ্ঠ শ্রোতা ক্লাব অ্যাওয়ার্ড ২০১৩”। বিশ্বব্যাপী ৬৫টি দেশের ৪১১২টি শ্রোতা ক্লাবের মধ্যে পরিচালিত এই প্রতিযোগিতায় ৮টি দেশ থেকে ৮টি শ্রোতা ক্লাবকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। শ্রেষ্ঠ ৮টি শ্রোতা ক্লাবের মধ্যেও আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) শ্রেষ্ঠদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়। আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড পুরস্কার বিজয়ী আমাদের ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত চীনের রাজধানী বেইজিং ভ্রমণ করেন ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান তাছলিমা আক্তার লিমা। এখানে বলতেই হয়, বাংলাদেশের ডিএক্সীং ইতিহাসে কোন নারী শ্রোতা বা শ্রোতা সংগঠকের এটিই ছিলো সর্বপ্রথম চীন বা বিদেশ ভ্রমণ।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে ফিলিপাইন থেকে প্রচারিত রেডিও ভেরিতাস এশিয়া (আরভিএ) বাংলা বিভাগের ভারতীয় কার্যালয় চিত্রবাণী “লিভিং রেস্পনসিভলি ইন দ্যা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে এবং সেখানে তারা আমাদের শ্রোতা ক্লাবকে আমন্ত্রণ জানায়। ক্লাব থেকে আমি ঐ প্রশিক্ষণে সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ করি। বলতেই হবে আমার ভারত ভ্রমণটিও হয়েছে এই বেতারের কল্যাণে।
সবমিলিয়ে বলতে পারি আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় হয়ত বিদেশ ভ্রমণ হতোনা, কিংবা হলেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়া যেতোনা। কিন্তু একমাত্র রেডিও আমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে, ভিন্ন দেশ দেখার স্বাদ মিটিয়েছে। আমার শ্রোতা জীবনকে ধন্য করেছে, সার্থক করেছে। তাই আমি রেডিও-র কাছে কতটুকু ঋণী তা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবোনা।  

সাধারণ শ্রোতা থেকে বেতারের মনিটর :
বেতারের একজন সাধারণ শ্রোতা হিসেবে রেডিও অনুষ্ঠান শুনা শুরু করি সেই শৈশবে। কিন্তু শৈশবের সেই সাধারণ শ্রোতার পথ পাড়ি দিয়ে আজ একটি আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাদেশ মনিটর হিসেবে কাজ করবো এটাও ছিলো আমার জন্য একটি অলৌকিক ঘটনা। আমি এখন গণচীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল (সিআরআই)-এর বাংলাদেশ মনিটর হিসেবে কাজ করছি। একসময় আমি রেডিও-তে অন্যদের কন্ঠ শুনতাম কিন্তু এখন আমি নিজেই বেতারে কন্ঠ দিই, অনুষ্ঠান তৈরী করি শ্রোতাদের জন্য, শ্রোতারাই এখন রেডিও-তে আমার কন্ঠ শুনে। রেডিও যে আমার শৈশবের সেই বেতারের প্রতি আকর্ষণের আগ্রহটিকে আজকের এই অবস্থানে এনে দিবে এবং আমার কল্পনার ইচ্ছা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দিবে আমি তা ভাবতেই পারিনি। বেতার শুনে আমি যেমন ধন্য তেমনি বেতারের সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমি পূর্ণও বটে।

বাংলাদেশ বেতারের গৌরবময় “হীরক জয়ন্তী” :  
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বিপুল উসাহ, উদ্দীপনা আর বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়ে গেল বাংলাদেশ বেতারের গৌরবময় ৭৫ বছর পূর্তি উসব – “হীরক জয়ন্তী”। ১৫-১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চারদিন ব্যাপী ঐ উসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ বেতারের আমন্ত্রণে আমন্ত্রিত হয়ে ঐ বর্ণিল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছেন। হীরক জয়ন্তী-তে একমাত্র শ্রোতাক্লাব হিসেবে বৃহ একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে “বেতার বিষয়ক ডিএক্সিং প্রদর্শনী”র আয়োজন এবং “শুভেচ্ছা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান” পরিচালনা করার সুযোগ পেয়ে আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করে। আমাদের ক্লাবের নেতৃবৃন্দ হীরক জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আগত বেতারের শ্রোতা, শ্রোতা ক্লাবের প্রতিনিধি, বেতারের কর্মকর্তা-কর্মী, বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী, ভাষাসৈনিক, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, ধারাভাষ্যকার, সংসদসদস্য, অভিনেতা, নাট্যব্যক্তিত্ব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণারয়ের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী, সচিব, উর্ধতন কর্মকর্তা, কবি, আবৃত্তিকার, নৃত্য শিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাধারণ দর্শকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিদের বিশেষ পেপারে শুভেচ্ছা স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। স্বাক্ষরকৃত সকল শুভেচ্ছা স্বাক্ষর পেপার পরে আমরা একত্রিত করে বিশেষ বই তৈরী করে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের ডিএক্স মিউজিয়ামে সংরক্ষণে রেখেছি। বলাবাহুল্য, গুণিজন, সেলিব্রেটি,  বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণারয়ের মন্ত্রী, সংসদসদস্য, সচিব, উর্ধতন কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা স্বাক্ষর নিতে গিয়ে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের প্রতিনিধিদের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরী হয়েছিলো। সেদিনের মূহুর্তগুলি এখনো ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। যা ছিলো কল্পনারও বাইরে। এই দূর্লব অনুভূতিগুলিও সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) এবং ক্লাবের প্রতিনিধিদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুধু তাই নয়, এত বড় বিশাল জাতীয় উসবে “শুভেচ্ছা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান” পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর প্রথম এবং এটি ছিলো শ্রোতা ক্লাবের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। যা শেষ পর্যন্ত দক্ষতার সাথে সফল করতে পেরেছে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)। এই অভিজ্ঞতা সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর ভবিষ্য আয়োজন গুলিতে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা জোগাবে।
হীরক জয়ন্তীর আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ ছিলো সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর “বেতার বিষয়ক ডিএক্সিং প্রদর্শনী”। এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ বেতার, চীন আন্তর্জাতিক বেতার, ভয়েস অব ইন্দোনেশিয়া, রেডিও ভেরিতাস এশিয়া,  ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড রেডিও জাপান, রেডিও তেহরান, রেডিও সৌদিআরব, অ্যাডভেন্টিস্ট ওয়ার্ল্ড রেডিও, কেবিএস ওয়ার্ল্ড রেডিও, রেডিও রোমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল, রেডিও কানাডা ইন্টারন্যাশনাল, রেডিও ফ্রি এশিয়া, রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, রেডিও ন্যাদারল্যান্ড, রেডিও প্রাগো, রেডিও তাইওয়ান ইন্টারন্যাশনাল, রেডিও রাশিয়া, রেডিও সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে পাওয়া মূল্যবান ও দূর্লব পুরস্কার এবং উপহারসামগ্রী দিয়ে বর্ণিল ভাবে স্টলের গ্যালারী সাজানো হয়েছিলো।
এগুলির মধ্যে ছিলো- গুরুন্ডিগ, সনি, পেনাসনিক, টেকসান, কেসিবো, এ্যালটা, ন্যাশনাল, স্মার্টসহ অন্যান্য ব্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের বেশ কিছু ডিজিটাল ও এ্যানলগ রেডিও; বিভিন্ন ব্যান্ড ও মডেলের ডিজিটাল ও এ্যানালগ ক্যামেরা; বিভিন্ন ব্যান্ড ও মডেলের আইপড, এমপিথ্রি, এমপিফোর; বিভিন্ন ব্যান্ড ও মডেলের হাত ঘড়ি, টেবিল ঘড়ি ও দেয়াল ঘড়ি; বিভিন্ন ব্যান্ড ও মডেলের ইউএসবি পেনড্রাইভ;
ইন্দোনেশিয়ার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর মডেল বা রেপ্লিকা; চীনের প্রভিডেন্ট সিটি বা নিশিদ্ধ নগরীর ও বিশ্বের বিলুপ্ত প্রাণী পান্ডার রেশমচিত্র; বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন, পত্রিকা, অনুষ্ঠানসূচী, ডায়েরী, নোটবুক, প্যাড, টেলিফোন ইনডেক্স, মানচিত্র, পকেট ক্যালেন্ডার, টেবিল ক্যালেন্ডার, দেয়াল ক্যালেন্ডার; স্টিকার, বুকলেট, বুকমার্ক, ভাষা শিক্ষার বই, ডিজিটাল ভাষা শিক্ষার কলম, বিভিন্ন ধরনের কলম, কোটপিন, ব্যাজ, চাবির রিং, বিভিন্ন ধরনের ট্রাবেল ব্যাগ, হাত ব্যাগ, অফিস ব্যাগ, সাইট ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের ক্রেস্ট, ওয়ালমেট, মাউস প্যাড, হাতপাখা, ক্যাপ, টি-শার্ট, ফেস্টুন, বেলুন, ম্যাগনেটিক ম্যাপ, টর্চলাইট, আয়না, ক্যালকুলেটর, ছাতা, খনিজ লবণ, ফাস্ট এইড কিট, টি স্পোন, মগ, ফটোফ্রেম, ব্যায়াম সেট, টেবিল রানার, স্কার্ফ, টাই, সিডি/ডিভিডি, স্কেল, পুতুল, আইডি কার্ড ফিতা, কিউএসএল কার্ড, সার্টিফিকেট, স্মারক খাম ও ডাকটিকেট, ফাইল ও ফোল্ডার, জ্যাকেট, টাউজার, ফেরত খাম, পোস্ট কার্ড, ভিউ কার্ড, রিসেপশন রিপোর্ট ফরম, ওয়ার্ল্ড রেডিও এন্ড টিভি হ্যান্ডবুকসহ অসংখ্য মূল্যবান সামগ্রী। এছাড়া স্টলের একটি স্পেশাল কর্ণার ছিলো শুধুমাত্র বাংলাদেশ বেতারের জন্য। সেখানে হীরক জয়ন্তীর র‌্যালির সাদা টি-শার্ট ও ক্যাপ, শ্রোতা ক্লাবের নেভিব্লু টি-শার্ট ও ক্যাপ, হীরক জয়ন্তীর বিশেষ কোটপিন, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে আমাদের বেতার : চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারের ব্যাগ এবং বেতার বাংলা দিয়ে সাজানো হয়েছিলো।
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর এত্তোসব চোখ ধাঁধাঁনো দুর্লভ, দামী ও লোভনীয় কালেকশন দেখে স্টলে আসা দর্শনার্থীরা বিস্মিত হয়েছেন, মুগ্ধ হয়েছেন, হতভাক হয়েছেন। বেতারের প্রচারনামূলক কিছু কিছু সামগ্রী স্টল পরিদর্শনে আসা দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ক্লাব থেকে বিনামূল্যে বিতরণও করা হয়েছিলো এবং নিয়মিত রেডিও শুনতে তাদের উসাহিত করা হয়েছে। সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) কর্তৃপক্ষ ডিএক্সিং প্রদর্শনী’র স্টল পরিদর্শনে আসা দর্শনার্থীদের পরিদর্শন বুকে মতামত ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। যা পরবর্তি অন্য কোন প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হবে।
এ আয়োজনটিও ছিলো সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর জন্য ভিন্ন মাত্রার। কারণ, এরপূর্বে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশের অন্যান্য প্রান্তে যেভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো এবারের প্রদর্শনীর স্টাইল, গ্যাটাপ, সেটাপ সবকিছু ছিলো ভিন্ন মাত্রার, ভিন্ন স্বাদের। দর্শকরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে পরিদর্শন করেছেন, মতামত দিয়েছেন, বেতার সম্পর্কে নতুন ভাবে জানার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সবমিলিয়ে ডিএক্সিং প্রদর্শনীটি মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে। সত্যি কথা বলতে কি এই ডিএক্সিং প্রদর্শনীর অনুভূতির গল্প লিখে শেষ করা যাবেনা। যারা নিজ চোখে দেখেছেন তাঁরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছেন আর যারা দেখেননি তাঁরা সত্যি সত্যি দূর্লব একটি সুযোগ মিস করেছেন। এসম্পর্কিত একাধিক খবর বিভিন্ন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়েছে।

উপসংহার :
উপসংহারে এসে বলতে চাই, রেডিও থেকে আমি আজকের জীবনে অনেক কিছু শিখেছি, এখনো শিখছি, অনেক কিছু পেয়েছি। বেতার আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, জানিয়েছে, বুঝিয়েছে, সচেতন করেছে, সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধি করেছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করেছে, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। বেতারে কাজ করার অভিজ্ঞতা তৈরী করে দিয়েছে। এক কথায় বেতার আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। বেতার কি শুধু আমার একার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে? না। বেতার আমাকে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ করেছে। বেতারের কল্যাণে ২০০৪ সালে ঢাকার এক শ্রোতার সাথে আমার পরিচয় হয়। যে পরিচয়ের সূত্র ধরে দু’জনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরী হয় এবং সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে পারিবারিক ভাবে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। যেহেতু আমার স্ত্রী একজন নিয়মিত বেতার শ্রোতা এবং আমি নিজেও বেতার শ্রোতা তাই আমাদের বিয়ের পর শ্রোতাসমাজ ও বেতার পরিবারে আমাদেরকে ডিএক্সিং কাপল বা শ্রোতা দম্পতি হিসেবে আক্ষায়িত করা হয়। বেতারের একটি সফল শ্রোতা ঝুঁটি হিসেবে এখন আমরা দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছি। এটাও ছিলো বেতারের কল্যাণে আমার পরম পাওয়া। সবমিলিয়ে আমার শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত যতধরনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার মূলে রয়েছে বেতার বা রেডিও।  আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি বেতারের শিক্ষা কখনো বিফলে যায়না। একমাত্র বেতার-ই পারে মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। আমি মনে করি, কেউ যদি বেতারের শিক্ষা তার নিজের এবং পারিবারিক জীবনে সফল ভাবে ব্যবহার করতে পারে কিংবা কাজে লাগাতে তবে তাঁর বা তাদের জীবনচিত্র সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যাবে। কারণ বেতার কখনো অপসংস্কৃতির শিক্ষা দেয় না। জয় হোক বেতারের, জয় হোক সকল শ্রোতা সমাজের। বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৭ সফল হোক।

দিদারুল ইকবাল
বাংলাদেশ মনিটর
চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)
এবং
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)
বাড়ী- ৩৩৬, বেকশন- ৭, রোড- ২
মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬, বাংলাদেশ।
মোবাইল: ০১৭১১০৫৪৯৮৫, ০১৯৮৫৬০১০৮৫
ই-মেইল: didaruliqbal@gmail.com
ওয়েবসাইট: www.sarc97.blogspot.com

No comments:

Central Head of South Asia Radio Club Bangladesh

Logo of South Asia Radio Club - SARC

QSL Card : Amateur Radio Operator_S21DAL

QSL Card : Amateur Radio Operator_S21DAL
(2024-02-06)

Labib Iqbal won the 3rd position (A category) in ONKUR-Sylhet Competition

Labib Iqbal won the 3rd position (A category) in ONKUR-Sylhet Competition
Chief guest of the program and other guests handing over the Award Crest to Labib Iqbal, Child Affairs Representative of South Asia Radio Club (SARC).

13th World Radio Day 2024 : “Radio: A Century Informing, Entertaining and Educating’’

13th World Radio Day 2024 : “Radio: A Century Informing, Entertaining and Educating’’

Our Associates, our Pride

Our Associates, our Pride

13th World Radio Day 2024

Welcome to Dr. Mohammad Harun or Rashid

Welcome to Dr. Mohammad Harun or Rashid
The newly appointed Regional Director of Sylhet Betar (26 May 2024)

Reception to Dr. Mohammad Harun or Rashid

Reception to Dr. Mohammad Harun or Rashid

Tree Plantation Event in Raozan Upazila of Ctg.

Tree Plantation Event in Raozan Upazila of Ctg.
South Asia Radio Club (SARC) - Raozan Thana Branch, Chattogram

Bangladesh Betar Award 2023 (World Radio Day)

Logo of Bangladesh Betar

Outreach Radio Award 2018 in India

Outreach Radio Award 2018 in India
South Asia Radio Club (SARC) Bangladesh win Outreach Radio Award 2018 in India (14-02-2019)

CRI's Excellent Audiences' Club 2013

CRI's Excellent Audiences' Club 2013
South Asia Radio Club (SARC) Bangladesh receives this Award from China (China Radio International- CRI at December 09, 2013)

27th Anniversary Logo of South Asia Radio Club

27th Anniversary Logo of South Asia Radio Club
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ লোগো।

26th Anniversary Logo of South Asia Radio Club

26th Anniversary Logo of South Asia Radio Club
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ লোগো।

Silver Jubilee Logo of South Asia Radio Club (SARC)

Silver Jubilee Logo of South Asia Radio Club (SARC)
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ লোগো।

2 Eras Logo of South Asia Radio Club (SARC)

2 Eras Logo of South Asia Radio Club (SARC)
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন তথা দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ লোগো।

Eid Reunion

Eid Reunion

Prayers for the early recovery

Prayers for the early recovery
সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দিদারুল ইকবালের দ্রুত সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া প্রার্থনা

Death Anniversary Prayers to Manik Miah

Death Anniversary Prayers to Manik Miah
মো: মানিক মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল

Relief Distribution of Friends Club

Relief Distribution of SARC

Holy Hajj Pilgrimage 2024

Holy Hajj Pilgrimage 2022

Holy Hajj Pilgrimage 2022
সার্ক- ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলামের পবিত্র হজ্বব্রত পালন

International Bangladesh DX Exhibition

International Bangladesh DX Exhibition

International Radio Fair in India

VOA’s Bangla Service Ends Radio Broadcasts

VOA’s Bangla Service Ends Radio Broadcasts
Voice of America (VOA) Bangla Language Service FM and Shortwave Radio Transmissions Officially END on July 17, 2021, after 63 years of Serving Bangladesh.

Special announcement of Radio Tehran : 'Annual Best Listener Club Award'

2019 DX Award

2019 DX Award

Certificate of Participation : Historic 7th March Celebration 2024

Certificate of Honor : 10th World Radio Day 2021

Certificate of Honor : 10th World Radio Day 2021
SARC has issued e-certificates to several international DXER’s

World Radio Day : 1st Virtual Int. DX Conference

World Radio Day : 1st Virtual Int. DX Conference

World Radio Day : 1st DX Event in Bangladesh

8th World Radio Day 2019

8th World Radio Day 2019
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা

SARC 3rd International Bangladesh DX Exhibition 2020

SARC 3rd International Bangladesh DX Exhibition 2020

Highlighten the Friendship : Bangladesh - India

Highlighten the Friendship : Bangladesh - India
5th Radio Fair 2019 in Odisha on the occasion of 8th World Radio Day

Outreach 9th International Radio Fair 2023 in India

Outreach 8th International Radio Fair 2022 in India

Outreach 8th International Radio Fair 2022 in India

Outreach 6th International Radio Fair 2020 in India

Outreach 6th International Radio Fair 2020 in India

Outreach 5th International Radio Fair 2019 in India

Outreach 4th International Radio Fair 2018 in India

World Radio Day

RVA's Ruby & Golden Jubilee celebrations in Faridpur

RVA's Ruby & Golden Jubilee celebrations in Faridpur

Travel to the Philippines at the invitation of RVA

Travel to the Philippines at the invitation of RVA

CRI's Excellent Audiences' Club Award 2013

China's Travel Island Hainan Contest Award 2012

Voice of Vietnam (VOV) : 75th Anniversary 2020

70th Independence Day of Indonesia-2015

70th Independence Day of Indonesia-2015
17 September 2015, Embassy of Indonesia in Dhaka, Bangladesh

50th Independence Day of Bangladesh

SARC- Khurushkhul Union Branch, Cox's Bazar

SARC- Khurushkhul Union Branch, Cox's Bazar

SARC - Nilphamari District Branch

SARC - Nilphamari District Branch
Branch Estd.: 31-01-2021

SARC - Gafargaon Upazila Branch, Mymensingh

SARC - Gafargaon Upazila Branch, Mymensingh
Branch Estd.: 25-12-2020

SARC - Madan upazila Branch, Netrokona

SARC - Madan upazila Branch, Netrokona
Branch Estd.: 25-12-2020

Inauguration of WRDXLCB Pallabi Branch in Dhaka

Inauguration of WRDXLCB Pallabi Branch in Dhaka
Branch Estd.: 22-09-2006

DXing News (ডিএক্সিং নিউজ)

DXing News special edition Unveiling on the occasion of World Radio Day 2023 in Kolkata, WB

DXing News special edition Unveiling on the occasion of World Radio Day 2023 in Kolkata, WB

SARC Branch List with Geographic Code

Amateur Radio Callsign Database (S21DAL)

BTRC : Certificate for Amateur Radio Licence

BTRC : Certificate for Amateur Radio Licence
Mohammed Didarul Alam received the certificate on 6 August 2023

Reception from SARC- Shahparan Branch, Sylhet

Reception from SARC- Shahparan Branch, Sylhet
5th Reception

Reception from Durbin Media Foundation, Ctg

Reception from Durbin Media Foundation, Ctg
4th Reception

Reception from SARC- Raozan Upazila Branch, Ctg

Reception from SARC- Raozan Upazila Branch, Ctg
2nd Reception

Reception from SARC- Lakkatura Tea G. Branch, Syl

Reception from SARC- Lakkatura Tea G. Branch, Syl
1st Reception

Certificate of Adventure Amateur Radio Day 2023

Certificates

Voice of Indonesia DXER's Forum Bangladesh

CRI Listeners Club of Bangladesh

CRI- South Asia Radio Club (CRI-SARC)

Labib Iqbal with Radio

Labib Iqbal with Radio
World Radio Day : Radio is You (12-02-2017)

Al Ikram Qadr with Radio

Congratulations, Betar DG Ahmed Kamruzzaman

Congratulations, Betar DG Ahmed Kamruzzaman
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে চলতি দায়িত্ব গ্রহণ করায় জনাব আহম্মদ কামরুজ্জামানকে SARC বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন স্মারক ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ড. মির শাহ আলম এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দিদারুল ইকবাল।

Bangladesh Betar DG Ahmed Quamruzzaman dies

Bangladesh Betar DG Ahmed Quamruzzaman dies
জন্ম: ০১/০১/১৯৬৩, মৃত্যু: ২৩/০৭/২০২২

Setu Bandhan : Chattogram Betar

Setu Bandhan : Chattogram Betar

8th International Radio Fair 2022

8th International Radio Fair 2022

4th International Bangladesh DX Exhibition 2022

4th International Bangladesh DX Exhibition 2022

Odisha State Museum, India (2022-04-17)

Odisha State Museum, India (2022-04-17)

RRI-VOI International Quiz 2022

RRI-VOI International Quiz 2022

4th Int: Bangladesh DX Exhibition 2022 in India

4th Int: Bangladesh DX Exhibition 2022 in India

Bangladesh DX Exhibition 2020 in Chattogram

Bangladesh DX Exhibition 2020 in Chattogram

Relief Distribution to Flood Affected in Sylhet

Relief Distribution to Flood Affected in Sylhet

Educational Tour 2022 in Rangamati

Educational Tour 2022 in Rangamati

National Children's Day 2022

National Children's Day 2022

Winter Clothes Distribution 2021 in Nilphamari

Winter Clothes Distribution 2021 in Nilphamari

Listeners' Meet at Thakurgaon

Listeners' Meet at Thakurgaon

ASEAN Photo Contest 2022

ASEAN Photo Contest 2022
"White pollution and its hazards to marine ecosystem"

COVID-19 Awareness Campaign 2020 in Sylhet

COVID-19 Awareness Campaign 2020 in Sylhet

Protests against Israele attacks & killings in Palestine

Protests against Israele attacks & killings in Palestine

বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে বাংলাদেশ বেতারের ধারাবাহিক নাটক: নিহার বানু

Membership Form of South Asia Radio Club (SARC)

SARC- Lakkatura Tea Garden Unit, Sadar, Sylhet