মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর ২০২২) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর, পাঁচলাইশে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এই উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ক্লাব সদস্য ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহীন চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল।
মূখ্য আলোচক রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল বলেন, ১৯৪১ সালের ১১ই অক্টোবর সাপ্তাহিক মাত্র ১৫ মিনিটের রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের বাংলা বিভাগ। পরে ১৬৬৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নিয়মিত সংবাদ সম্প্রচার শুরু। সেই থেকে হাটি হাটি পা পা করে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৮১ বছরে পদার্পণ করেছে বিবিসি বাংলা বিভাগ। নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান তথা সংবাদ পরিবেশনের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, তথা এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, আমেরিকা এবং ইউরোপ-সহ সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি বাংলাভাষী শ্রোতাদের কাছে বিবিসি বাংলা অন্যতম একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারের কারণে বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে বিবিসি বাংলা। তিনি আরো বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে বিবিসি বাংলা বিভাগের মাধ্যমে জানতে পারলাম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ২৯শে সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাসহ ১০টি অর্থাৎ আরবি, ফার্সি, চীনা, কিরগিজ, উজবেক, হিন্দি, ইন্দোনেশিয়ান, তামিল ও উর্দু ভাষার রেডিও সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে শুধু অনলাইন কার্যক্রম (ওয়েবসাইট পরিষেবা) পরিচালনা করবে। অর্থাৎ বিবিসি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে ৮১ বছর সম্প্রচারের পর বিবিসি বাংলা রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী মার্চ ২০২৩ সালের মধ্যে বিবিসি তার বাংলা রেডিও সম্প্রচার পুরোপুরি বন্ধ করে দিবে। বিবিসি’র বাংলা অনুষ্ঠানটি বন্ধ হলে এ অঞ্চলের অনেক শ্রোতাদের মত সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক)-এর সদস্যবৃন্দ বর্হিবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সঠিক সংবাদ শ্রবণ থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বিবিসি বাংলার ৮১তম বার্ষিকীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বাংলা ভাষার কোটি শ্রোতাদের কথা চিন্তা করে বিবিসি বাংলা রেডিও অনুষ্ঠান যেন বন্ধ না করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার শাহীন চৌধুরী বলেন, আমি শৈশব থেকে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শুনে আসছি। বিবিসি’র সংবাদের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, আগামীতেও থাকবে। আমাদের দাবী বিবিসি যেন তার বাংলা রেডিও অনুষ্ঠান বন্ধ না করে। আমাদের পরবর্তি প্রজন্মও যেন বিবিসি রেডিও’র সাথে থাকতে পারে আজকের ৮১তম বার্ষিকীতে এটাই আমার প্রত্যাশা।
মোসলেহ উদ্দিন খান জুয়েল বলেন, বিবিসির সাথে আমাদের শৈশব, কৈশর এবং আজকের এসময়ে অনেক স্মৃতি জড়িত। বিশেষত বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। যে কোন দুর্যোগে বিবিসি সঠিক সময়ে আমাদের সঠিক খবর পৌঁছে দেয়। এছাড়া বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সময় বিবিসি’র সংবাদ আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা এবং আস্থার মাধ্যম। বর্তমান বিশ্বায়নের যোগে যখন নানা খবর ভুয়া খবরে (ফেক নিউজ) সয়লাব তখন আমরা বিবিসি’র প্রতি আস্থা রাখছি তার সত্য এবং সঠিক সংবাদের প্রতি। তিনি আরো বলেন, আমার বাবার বয়স প্রায় ৮৫ বছর, তিনি এখনো রেডিও-তে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শুনছেন। তিনি যখন জানতে পারলেন বিবিসি রেডিও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে একজন সন্তান হিসেবে আমি তার মনোজগৎ কেমন হয়েছে তা উপলদ্ধী করতে পেরেছি। ৮১তম বার্ষিকীতে বিবিসি’র প্রতি অনুরোধ তারা যেন বাংলা রেডিও অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখে এবং বাংলাদেশের মানুষকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত না করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ হায়দার জীবন, সদস্য মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, মো. আজিম উল্যাহ ভূঁইয়া, এম এ হাশেম আকাশ, সফিউল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মামুন উদ্দিন, মো. মোশারফ হোসেন, মো. রাফি হোসেন প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment