ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস উদযাপন করেছে
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ
দিবসটি উপলক্ষে সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার হাবিব নগর চা বাগানে ৭ মার্চের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ড. মির শাহ আলম, কেন্দ্রীয় ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকাবাল, সার্ক- হাবিব নগর চা বাগান শাখা, জৈন্তাপুর, সিলেটের উপদেষ্টা ও বাগান পঞ্চায়েত সদস্য গহুর চাঁন রায়, ক্লাব সভাপতি কিশোর শিং ঘাটোয়ার, সাধারণ সম্পাদক সুজলা বাউরী, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা আক্তার সখি, কার্যকরী সদস্য বৈশাখী রাউতিয়া, সঞ্জিত কৃষ্ণ গোয়ালা ও সুমনা বাউরী, খাঁন চা বাগান শাখার সহ-সভাপতি লোচন বাড়াইক ও কার্যকরী সদস্য শিমুল বাড়াইক প্রমুখ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। আলোচনা সভার পূর্বে বাগানের শহীদ মিনারের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আলোচনার স্থলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটির অডিও বাজিয়ে শোনানো হয়।
আলোচনা সভায় ড. মির শাহ আলম বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি রেসকোর্স ময়দান থেকে রেডিওতে রিলে (সরাসরি প্রচার) হওয়ার কথা থাকলেও সামরিক সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে রিলে করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু রিলে করা যাচ্ছিল না সেহেতু বেতারের কয়েকজন কর্মকর্তা সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইএমআই মেশিনে ভাষণের অডিও রেকর্ড করে রাখেন। পরবর্তীতে তা প্রচারের ক্ষেত্রেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্রোহী ভূমিকা নিয়েছিলেন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের ৮-১০ জন কর্মকর্তা-কর্মী। তাদের কর্মবিরতী থেকে ফেরাতে তৎকালীন সরকার ৭ মার্চ প্রচারিত না হওয়া ভাষণটি কোন প্রকার কাটছাট ছাড়া ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও খুলনা কেন্দ্র থেকে একযোগে প্রচার করতে দিতে বাধ্য হয়। ফলে বাঙালি জাতি রেডিওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ একযোগে নিজের কানেই শুনতে পান এবং ভাষণটি রেডিওতে প্রচারের কারণেই তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পায়। “ইএমআই মেশিনে রেকর্ড করা ভাষণের দৈর্ঘ্য ছিল ২১ মিনিট। রেডিওতে প্রচারিত হয় ওই ২১ মিনিটই। পরবর্তীতে ভাষণটি সম্পাদনা করে গ্রামোফোনে রেকর্ড করা হয়। ভাষণের সময় যেসব জায়গায় এমনি শব্দ ছিল বা ফাঁকা ছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে যেটা রাখা হয় সেটার দৈর্ঘ্য হয় ১৮ মিনিট।”
৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে দিদারুল ইকবাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর মাত্র ১৮/১৯ মিনিটের ভাষণেই নিপীড়িত-নির্যাতিত বাঙালি জাতি সেদিন খুঁজে পেয়েছিলো মুক্তির মহামন্ত্র। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা” বঙ্গবন্ধুর এই যুগান্তকারী ভাষণ সেদিন জাদুমন্ত্রের মতো সমগ্র জাতিকে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিলো।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এই ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ওই বছর ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৭ মার্চের ভাষণকে 'ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে' তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংস্থাটির ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি’ (আইএসি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের’ (বিএনসিইউ) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভাষণটির স্বীকৃতি মেলে।
বার্তা প্রেরক,
তাছলিমা আক্তার লিমা
ভাইস-চেয়ারম্যান
সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ
No comments:
Post a Comment