(নোট: লাবীব ইকবালের ক্ষুদে অনুভূতি ও তার বাবার কথামালার
সংমিশ্রণে বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে এই নিবন্ধ।)
আমার নাম লাবীব ইকবাল। বয়স ৪ বছরের একটু বেশি। সম্ভবত আমিই চীন
আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের সর্ব কনিষ্ঠ শ্রোতা এবং আমার হয়ে এটিই
সিআরআই-কে নিয়ে সর্ব প্রথম লেখা। আমার প্রায় দু’বছর বয়স থেকেই আব্বুর হাত ধরেই
রেডিও নিয়ে উঠা-বসা। রেডিও-তে কী হয় তা না বুঝলেও এতে প্রচারিত গান শুনতে আমার ভালো
লাগে। তাই আব্বুর সংগ্রহে থাকা বিভিন্ন রেডিও মাঝে মাঝে অন করে গান শুনতাম। আব্বু
যখন রেডিও শুনতেন তখন তার পাশে বসে দেখতাম তিনি কিভাবে রেডিও অন-অফ করেন এবং
কিভাবে পাশে থাকা চাকা ঘুরিয়ে বা বোতাম টিপে বিভিন্ন স্টেশন ধরেন। আব্বুও আমাকে
তার সাথে বসে চুপ করে রেডিও শুনতে উৎসাহিত করতেন। দিনের বেলায় আব্বু অফিসে চলে
গেলে আমি আম্মুকে বলতাম আব্বুর শোকেস থেকে রেডিও বের করে দিতে। এরপর রেডিও’র চাকা
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কোথায় গান বা কথা বলছে সেখানে থামিয়ে কি হচ্ছে তা শুনতাম। যদিও
রেডিও-তে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো আমি ঠিকমত বুঝিনা বয়সের কারণে তবুও শুনে যেতাম। আমার
আম্মু’ও একজন রেডিও শ্রোতা। আমি ঠিকমত স্টেশন ধরতে না পারলে আম্মু কোন স্টেশনে গান
হচ্ছে সেটি ধরিয়ে দিতেন। আমার আগ্রহ দেখে আব্বু আমাকে একটি কালো ও একটি লাল রঙের
রেডিও দিয়ে দিলেন যখন তখন অনুষ্ঠান শোনার জন্য। রেডিও চালানোর সময় আমি বার বার
লম্বা অ্যান্টেনাটি উপরের দিকে উঠিয়ে দিতাম এবং এদিক সেদিক ঘুরাতাম। এভাবে করার
ফলে একদিন দু’টি রেডিও’র অ্যান্টেনা ভেঙ্গে যায় এবং আব্বু বেশ বকাঝকা করেন। আমি
দেখেছি আব্বু যখন রেডিও শুনতেন তখন তিনি রেডিওর অ্যান্টেনা উপরের দিকে তুলে দিতেন।
তার দেখা দেখি আমিও নিজে নিজে সেটি করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমার টানা হেছড়ায়
সেটি ভেঙ্গে যাবে তা বুঝতে পারিনি। পরে আব্বু সেটি ঠিক করে দিয়েছেন। আমার আব্বু
প্রতিদিন রাতে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান শুনেন আমাকে
তার পাশে বসিয়ে কিংবা কোলে নিয়ে। ফলে আমিও আব্বুর সাথে সিআরআই-এর অনুষ্ঠান শুনি। আব্বুর
মাধ্যমে রেডিও-তে সিআরআই বাংলা অনুষ্ঠানের সাথে আমার পরিচয়। এখানে ‘সুরের ধারায়’
অনুষ্ঠানে প্রচারিত চীনা গান আমার খুব ভালো লাগে, যদিও আমি ঐভাবে কিছু বুঝিনা।
মাঝে মাঝে এই চীন বেতারে শনিবারের ‘মুক্তার কথা’ অনুষ্ঠান সহ অন্য অনুষ্ঠানে আমার
আব্বুর কথা শুনতে পাই। আব্বু রেডিও-তে কথা বলার সাথে সাথে আমি বুঝতে পারি বা চিনতে
পারি তার কন্ঠ। তখন বেশ আনন্দ হয় এবং আমি আব্বুকে আমার ভালোবাসা জানাতে তার গালে
চুমু দিয়ে আদর করি। আমার আব্বু দিদারুল ইকবাল ও আম্মু তাছলিমা আক্তার লিমা দু’জনেই
চীন আন্তর্জাতিক বেতারকে অনেক বেশি ভালোবাসে এবং পছন্দ করে। শুধু তাই নয়, আমার
ফুফু, ফুফা, নানু, মামা সবাই সিআরআই বাংলার অনুষ্ঠান শুনে। অর্থাৎ আমাদের পরিবার
সিআরআই পরিবার।
আব্বুর কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এবং স্মার্ট ফোনে ছবির
গ্যালারিতে দেখেছি আব্বু ও আম্মু দু’জনেই চীন দেশে গেছেন সিআরআই-এর আমন্ত্রণে।
তাদের অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি আমি প্রায় দেখি মোবাইল ফোন ও ছবির এ্যালবামে এবং
আমাদের বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে তাদেরও দেখায়। আমি আব্বু আম্মুকে জিঙ্গেস করেছিলাম
তারা তখন সাথে কেন আমাকে নিয়ে যায়নি? তারা আমার কথা শুনে অনেক হেসেছে এবং বলেছে
তখন নাকি আমার জন্ম হয়নি। আব্বু ও আম্মুর চীন ভ্রমণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে আমাকে
মুক্তা আন্টি, সুবর্ণা আন্টি, স্বর্ণা আন্টি এবং ইউ আন্টির সাথে পরিচয় করিয়ে
দিয়েছেন। আমি এখন ছবি দেখে তাদেরকে চিনতে পারি। ইউ আন্টি ও মুক্তা আন্টিকে আমি এখন
অনেক বেশি চিনি। তাছাড়া ইউ আন্টিকে আমি ম্যাডাম বলে বেশি জানি। কারণ আব্বু
প্রত্যেক সপ্তাহে তাদের সাথে ফোনে যখন কথা বলেন তখন আমি পাশে থাকি। মোবাইলে ছবি
দেখে আমি তাদের চেহারা মুখস্ত করে ফেলেছি। আামার বয়স যখন কম তখন স্বাভাবিক ভাবে
আমার জ্ঞান ও স্মৃতি খুবই কম এবং গল্প বা চিঠি লেখার প্রশ্নই আসেনা। কারণ আমি সবেমাত্র
বাংলা ও ইংরেজী বর্ণমালা পড়তে লেখতে শিখেছি। যদিও আব্বু আম্মুর কল্যাণে সিআরআই-এর
সাথে আমার যোগসূত্র রয়েছে জন্মের পর থেকেই তাই কিছু স্মৃতিও রয়েছে এই অল্প বয়সে। আব্বু
বলেছে আমার স্মৃতিগুলো গুছিয়ে গল্প লিখে তুলে ধরবে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে আমার
হয়ে। আর এটিই সেই লেখা।
আমার একটি সুন্দর চীনা নাম রয়েছে, লেই য়ি বো (Lei yi bo)। হ্যাঁ,
২০১৫ সালে বাংলাদেশে সফরে আসা চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগের বর্ষীয়ান কর্মী
ও সাবেক পরিচালক মাদাম চুং শাওলি আমার এই চীনা নাম রেখেছেন। আন্টিকে ঐদিন সরাসরি
না দেখলেও তাঁর প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ।
ইতিমধ্যে আমি আব্বু আম্মুর সাথে চীন বেতারের দুটি বড় অনুষ্ঠানে
অংশ নিয়েছি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঢাকায় সোনারগাঁ হোটেলে সিআরআই কর্তৃক আয়োজিত চীনা
খাদ্য উৎসবে যোগ দিয়েছি। অনুষ্ঠানে চীনের বিশিষ্ট শেফবৃন্দ আমাকে তাদের কোলে নিয়ে
বেশ আনন্দ করেছেন এবং ছবি তুলেছেন। আমি তখন ভয়ে প্রায় কেদে দিয়েছিলাম। এরপর
আব্বু-আম্মু সহ সিআরআই বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক সুবর্ণা আন্টির সাথে ছবি তুলেছি।
সুবর্ণা আন্টি দেখতে অনেক সুন্দর। ঐদিন অনুষ্ঠান শেষে আমি চীনের মজার মজার খাবার
খেয়েছি। সিআরআই-এর কোন অনুষ্ঠানে এটিই ছিল আমার প্রথম অংশগ্রহণ।
২০১৮ সালের মে মাসে ঢাকায় সিআরআই এর একটি শ্রোতা সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রধান আমি যাকে ম্যাডাম বলে চিনি
সেই ইউ আন্টি ও প্রেমা আন্টি উপস্থিত ছিলেন। এখানেও আমি আব্বু আম্মুর সাথে
অংশগ্রহণ করি সবচেয়ে ক্ষুদে শ্রোতা হিসেবে। ইউ আন্টি আমাকে তার কোলে নিয়ে আদর
করেছেন, চকলেট দিয়েছেন এবং ছবি তুলেছেন। ২০১৬ সালে ইউ আন্টি আরেকবার বাংলাদেশে
এসেছিলেন এবং তখন আমার জন্য একটি খেলনা উপহার দিয়েছিলেন। ঐসময় ইউ আন্টির সাথে দেখা
হয়নি আমার। এবার যখন দেখা হয়েছে তখন আন্টিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম আমাকে সুন্দর
একটি বুদ্ধিবৃত্তিক খেলনা উপহার দেওয়ার জন্য। আমি এখনো সেটি দিয়ে খেলা করি। আব্বু
বলেছেন কোন ভাবেই যেন আমি ইউ আন্টির দেওয়া খেলনাটি হারিয়ে না ফেলি। তাই যখন ঐটি
দিয়ে খেলা করি, খেলা শেষে সেটি যত্ন করে ড্রয়ারে রেখে দিই। আর এভাবেই সিআরআই-এর
সাথে আমাদের পারিবারিক বন্ধন বিস্তৃত ও ঘাড় হয়ে উঠেছে এবং আমাদের আত্নার সাথে মিশে
আছে অনেক তথ্যবহুল মূল্যবান মধুর স্মৃতি। আব্বু আম্মুর আশা চীন বেতারের বাংলা
অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে আমি বেড়ে উঠি এবং চীনা ভাষা শিখে চীনে উচ্চতর লেখা-পড়া করে
চীনের ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখি। ফলে এখন থেকেই আমার চীন সম্পর্কে জানার অন্যতম মাধ্যম
হয়ে উঠেছে চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বাংলা বিভাগ।
আব্বুর কাছে শুনেছি আগামী নতুন বছরের প্রথম দিন চীন
আন্তর্জাতিক বেতার, বাংলা বিভাগের ৫০তম জন্মদিন। আব্বু বলেছে ঐদিন আমরা কেক কেটে
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের জন্মদিন পালন করবো। এর আগেও আমি দু’বার কেক কেটে চীন
বেতারের জন্মদিন পালন করেছি।
চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বাংলা বিভাগের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে
আমি বেতারের সকল আঙ্কেল, আন্টি ও আব্বুর বন্ধুদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি
এবং সিআরআই বাংলার শতবর্ষ উদযাপনের উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে আজকের মত এখানে শেষ করছি।
সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
লাবীব ইকবাল (লেই য়ি বো)
বাড়ী- ৭৩৫, রোড- ১,
বাহুবল গ্রীণল্যান্ড আবাসিক এলাকা,
খাদিমনগর- ৩১০৩,
সিলেট সদর, সিলেট, বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment