Special Articles on the occasion of the 50th
Founding Anniversary of CRI Bengali Service : China Radio International (CRI)
is a golden window to know the China
১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রথম কন্ঠ ইথারে ভেসে ওঠে। রোজ কেবল ১৫ মিনিটের জাপানী ভাষার অনুষ্ঠান সম্প্রচার দিয়েই এই বেতারের যাত্রা শুরু হয়। তখন এই সংস্থার নাম ছিলো ইয়ান আন সিন হুয়া বেতার। চীনা জনগণ আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যকার সমজোতা এবং মৈত্রী গভীরতর করার লক্ষ্য নিয়েই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পথচলা শুরু হয়।
বিশ্বের প্রচার মাধ্যমগুলোর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেতার কেন্দ্র চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বহি: বিশ্বের শ্রোতাদের জন্য বর্তমানে ৬৫টি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করছে। যার
গর্বিত একটি ভাষা হচ্ছে- বাংলা।
২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি উদযাপিত হবে রেডিও পেইচিং (ইংরেজী নাম রেডিও বেইজিং) থেকে শুরু করা আজকের চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের ৫০তম বার্ষিকী বা সুবর্ণজয়ন্তী (১৯৬৯-২০১৯)। বাংলাদেশ এবং চীনে ৫০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
তৎকালীন রেডিও পেইচিং থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা অনুষ্ঠান প্রথম ইথারে জায়গা করে নেয় ১৯৬৯ সালের ১লা জানুয়ারি। আর এই বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান
প্রচারের প্রস্তুতি কাজ শুরু হয় ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে। তৎকালীন পিকিং রেডিও-তে বাংলা
ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্যে ১৯৬৬ সালে ৩ বছর মেয়াদে নিযুক্ত হন সাংবাদিক কমরেড
ফয়েজ আহমদ। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নেতৃত্বের ফলে অল্প সময়েই পিকিং রেডিও-তে বাংলা
ভাষার অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়, যার দায়িত্বে তিনি ছিলেন দুই বছর (১৯৬৬-১৯৬৭ সাল)।
গণচীনের বুক থেকে বাংলা ধ্বনি ইথারে ছড়িয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব পালন করায় এই সুযোগে
আমি তাঁর এবং তদানীন্তন পিকিং রেডিও’র অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উদ্যোগের প্রশংসা করি এবং
কৃতজ্ঞতা জানাই সমস্ত বাংলাভাষী শ্রোতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে।
বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল দেশ থেকেই বর্হিদেশীয় অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এমন বেতারের সংখ্যাও কম নয়। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা অনুষ্ঠান আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বেতার হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক বেতার প্রতিষ্ঠান যারা অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজেরাই আন্তর্জাতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আনন্দের কথা বাংলা বিভাগের আশি ভাগ কর্মীই জাতিতে চীনা, ভাষায় যেন বাঙ্গালীই বটে। যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ও পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে অনুষ্ঠান পরিবেশন করছেন।
রেডিও শোনা এক ধরণের বিজ্ঞানসন্মত শখ। এখানে বয়স কোন ব্যাপার নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সের লোকদের কাছেই বেতার অনুষ্ঠান সমান আকর্ষনীয়। আমারও হয়েছে ঠিক তাই।
বিংশ শতাব্দীর নবম দশক বা ৯০-এর দশকের শুরুর দিকের কথা, বাবার এক ব্যান্ডের সাদা রঙের
একটি ছোট রেডিও নিয়ে প্রতিদিন গলায় ঝুলিয়ে গান শুনতে শুনতে ছোট বোনের সাথে খেলাধূলা
করলেও তখন বেতার বা রেডিও’র গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিলোনা। তবে ঐসময় ছোট
মনে প্রায়শই প্রশ্ন জাগতো এত ছোট রেডিও’র ভেতরে কী করে মানুষ ঢুকে রয়েছে, কথা বলছে,
গান করছে? রেডিও’র চারপাশ ঘুরিয়ে বার বার জানার চেষ্টা করতাম ভেতরে মানুষ ঢোকার রাস্তা
কোনটি এবং তারা আমার রেডিও’র ভেতরে কি করে ঢুকলো? কিন্তু উপযুক্ত কোন উত্তর খুজে পেতাম
না। আজ যখন সেই রেডিওতে আমি নিজেই কথা বলছি তখন শিশুবেলার সেই স্মৃতির কথা স্মরণ করে
নিজেই মনে মনে হাসি এবং ভাবি তখন কতই না বোকা ছিলাম! শিশুবেলার সেই বোকা বোকা চিন্তাগুলো
এখনো ইচ্ছে করে মনে করে আনন্দ খুজে বেড়াই, রোমাঞ্চিত হই এবং বার বার সেই ছোটবেলায় ফিরে
যেতে মন চায়।
এই রেডিও একসময় আমার জীবনে
গভীর রেখাপাত সৃষ্টি করে যা কখনো আমার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবেনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশের উপকূলীয়
এলাকায় স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ঘন্টায় ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৫ কিলোমিটার
গতিতে ও ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। নিমিষেই লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে মানুষের
স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে ভেসে যায় মানুষ, ঘরবাড়ী, সহায় সম্বল, গৃহপালিত পশুপাখি
সহ সবকিছু। প্রাণহানি ঘটে লক্ষ লক্ষ মানুষের। ঘটনার দিন রাতে বাংলাদেশ বেতার, চট্টগ্রাম
থেকে প্রচারিত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সতর্কবার্তা প্রচারের শেষ ঘোষণাটি
শুনার পর মহাবিপদের কথা আঁচ করতে পেরে সাথে সাথে শুধুমাত্র সাথে রেডিও এবং টর্চলাইট
পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে পরিবারের সকলে ঘরের চিলেকোঠায় আশ্রয় নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর
হাত থেকে সেদিন আমরা বেঁচে যায়। বলাযায় বেতারের ঐ সতর্কবার্তা প্রচারের নির্দেশনা মোতাবেক
দ্রুত জীবন রক্ষার কৌশল গ্রহণ করে আমাদের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার ঘটনার পর থেকেই আমি
রেডিও-র প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। যা আমার জীবনের একমাত্র বিপদের বন্ধু হিসেবে স্থান করে
নেয়। কারণ, বেতারের সতর্কবার্তাটিই সেদিন আমাকে সহ আমার পরিবার-পরিজনের সকলকেই জীবন
রক্ষার পথ দেখিয়ে দেয়। ভোরের অন্ধকার কাটার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আমরা
দেখি আমাদের বাড়ীর প্রতিটি ঘর, গাছ-পালা ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড করে মুরুভূমি বানিয়ে দিয়েছে
এবং কেড়ে নিয়েছে ১৫টি জীবন। যাদের মৃত দেহ বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছিলো। এদের মধ্যে
ছিলো নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক। আমরা কেউ বিন্দুমাত্রও ভাবতে পারিনি আমাদের ভাগ্যে
শতাব্দীর নিষ্ঠুর মহাপ্রলয় ঘটবে। এ ঘটনার পর থেকেই আমি নিয়মিত রেডিও শুনতে থাকি। কিন্তু
রেডিও কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার
স্বপ্ন আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। এমনকি প্রধান শখ হিসেবেও না। কিন্তু বর্তমানে বেতার
কার্যক্রম এবং তার মধ্যকার যে সম্পর্ক তা আমাকে
এখন বিস্মিত করে। বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শুনার পাশাপশি এমনি একদিন আন্তর্জাতিক
বিভিন্ন বেতারের অনুষ্ঠান শুনা শুরু করি। চীন আন্তর্জাতিক বেতার, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা,
রেডিও মস্কো, ডয়চে ভেলে, রেডিও জাপান, রেডিও তেহরান, রেডিও ভেরিতাস এশিয়া সহ আরো অনেক
বেতার। সেই কৈশোর থেকেই আমি চীন বেতারের একজন আগ্রহী শ্রোতা ছিলাম। সুদূর গণচীন থেকে
চীনা বন্ধুদের মুখে ভাঙা ভাঙা বাংলা শুনে কী যে পুলকিত হতাম! তাদেরকে দেখতে খুব ইচ্ছে
হতো। বাংলা বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আমাকে দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করতো। ফলে অন্যান্য বেতারের
পাশাপাশি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান শুনে আমার মতামত ও প্রস্তাব জানিয়ে নিয়মিত
লিখে যেতাম শত শত চিঠি।
সংবাদপত্রে যেমন পাঠক থাকে, টেলিভিশনের যেমন ভিউয়ার্স বা দর্শক, রেডিও’র জন্যে তেমনি শ্রোতাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আধুনিক দুনিয়ায় শ্রোতাদের মতামতকে উপেক্ষা করে কোন বেতারের অনুষ্ঠানই সফল হতে পারে না। আর তাই দেশে দেশে শ্রোতাদের সংঘ বা ক্লাব গড়ে উঠেছে। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের তালিকাভূক্ত এমনি একটি সহযোগী সংগঠন আজকের সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব যা ১৯৯৭ সালের ১লা অক্টোবর বন্দরনগরীর চট্টগ্রাম রেলওয়ের সিগন্যাল কেবিন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করি তদানীন্তন
ওয়ার্ল্ড রেডিও ডিএক্স-লিসনার্স ক্লাব, চট্টগ্রাম নামে। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমার
সঙ্গী ছিলেন চট্টগ্রাম ফতেয়াবাদের বন্ধু এম. ফোরকান ও উজ্জল দাস। আমাদের ক্লাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্যান্য রেডিও’র
পাশাপাশি চীন বেতারের অনুষ্ঠান শোনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে গণচীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ও শ্রোতাদের মাঝে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ স্থাপন, একে অপরকে জানা এবং বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা। যেমন-
(ক) বাংলাদেশ এবং চীনের জনগণের মৈত্রীর অন্যতম বাহন ‘সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব’-এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দু’দেশের জনগণের মাঝে বন্ধুত্ব প্রগাঢ়করণ এবং পারস্পরিক সৌভাতৃত্ব ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে কাজ করা।
(খ) চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাদেশী শ্রোতাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা।
(গ) চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাবৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেয়া।
(ঘ) চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানের মানোন্নয়নে সহযোগিতা করা।
(ঙ) বেতার অনুষ্ঠান শ্রবণ ও বেতারে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠাতে শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধকরণ।
(চ) চীন আন্তর্জাতিক বেতারের অনুষ্ঠান ও নিয়মকানুন সম্পর্কে শ্রোতাদের অবহিতকরণ।
(ছ)চীন আন্তর্জাতিক বেতার-কে নিয়ে বিভিন্ন প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
(জ)চীনের চিত্রপ্রদর্শনী
ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা এবং
(ঝ)শ্রোতাসংঘের প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন
বুলেটিন, প্রচারপত্র প্রকাশ করা।
আমাদের সাউথ এশিয়া রেডিও
ক্লাব ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছরে বাংলাদেশের
শ্রোতাদের সাথে আকাশপথে চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার ও সুদৃঢ় করতে বিশাল
ভূমিকা রেখেছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে চীন বেতারের প্রচারনায়
চীনা চিত্রপ্রদর্শনী ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ডিএক্সীং প্রদর্শনী, মেলা আয়োজন, সাংস্কৃতিক
ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, বৃক্ষ রোপণ, চীনের জাতীয় দিবস ও চীন বেতারের প্রতিষ্ঠা
বার্ষিকী উদযাপন, স্বাস্থ্য ক্যাম্প, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের
আয়োজন করেছে বছর জুড়ে। যেসব অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত, সিআরআই বাংলা বিভাগের কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, কমিশনার, চেয়ারম্যান, পত্রিকার সম্পাদক, বাংলাদেশ
বেতারের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ সহ বিশিষ্টজন উপস্থিত থেকেছেন।
যাইহোক, আগেই বলেছি, পৃথিবীর
যে কয়টি দেশের বেতার থেকে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় চীন আন্তর্জাতিক বেতার সেগুলোর
মধ্যে ব্যতিক্রম। এ বেতারের অনুষ্ঠান পরিবেশনায় সরাসরি এককভাবে কোন বাঙ্গালী জড়িত নেই।
যারা আছেন সবাই চীনা। চীন আন্তর্জাতিক বেতার ২৫ কোটিরও বেশী বাংলাভাষী জনগোষ্ঠির কাছে
গত প্রায় ৫০ বছর অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে আকাশ পথে মৈত্রীর সেতুবন্ধন রচনা করেছে।
ইথারের মাধ্যমে শ্রোতাদের কানে কানে সাম্য ও মৈত্রীর কথা প্রচার করে এসেছে। সময়ের বিবর্তন
ও যুগের দাবীর প্রেক্ষিতে পিকিং হয়ে গেল পেইচিং যা ইংরেজীতে বেইজিং। রেডিও পেইচিং থেকে
অবশেষে বর্তমান নামে রূপ নিল- চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)। চীন আন্তর্জাতিক বেতার
বাংলা বিভাগের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর শ্রোতা এবং সাউথ
এশিয়া রেডিও ক্লাব কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-এর সকল
নেতা এবং কর্মীকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
শব্দযন্ত্রের সামনে বসে
শ্রোতাদের সঙ্গেঁ গত ৫০ বছরে যোগ দিয়েছেন সিআরআই-এর বহু কর্মী। আমরা বিশেষ শ্রদ্ধার
সাথে স্মরণ করছি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রবীণ কর্মী চুং শাওলি, ফোং সিউ ছিয়েন, চৌ চিন
ছাও, লি ইউয়ান শান, শি চিং উ, থান ইয়াও খাং, লি ওয়েই তান, পাই খাই ইউয়ান, লি যুই তান,
চিয়াং চিং ছেং-কে। যাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার হাত ধরে সিআরআই বাংলা বিভাগ আজ পরিপূর্ণ
যৌবনে এসে পৌঁছেছে।
আমরা ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা
জানাতে চাই বর্তমান তারুণ্যে ভরপুর কর্মী- ছাও ইয়ান হুয়া (সুবর্ণা), ইয়াং ওয়েই মিং
(স্বর্ণা), ছাই য়ুএ (মুক্তা), খোং চিয়া চিয়া (প্রেমা), ওয়াং তান হোং (রুবি), ওয়াং হাইমান
(উর্মি), মোং ফেন সি (প্রকাশ), লিলু, শুয়ে ফেই ফেই, লিলি (লাবণ্য), ওয়াং ছুই ইয়াং
(জিনিয়া), শিয়ে নান (আকাশ), লি ওয়ান লু (শিশির) সহ সকল বন্ধুদের।
চীনা বন্ধুদের পাশাপাশি
এই বেতার অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন,
ফয়েজ আহমদ, জাহিদুল হক, সাযযাদ কাদির, প্রফেসর ড. জাহানারা বেগম, মহিউদ্দিন তাহের
(২৭/০৩/১৯৯৭-২৭/০৭/২০০৬), মাহমুদ হাশিম, ইলিয়াস খান, আবাম ছালাউদ্দিন, অমিত হাবিব,
শিহাবুর রহমান, মো: মফিজুর রহমান, শান্তা মারিয়া, সাইদুল রহমান লিপন, সরকার আইরীন নিয়াজী
মান্না এবং বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন, কে এম আলিমুল হক, এনামুল হক টুটুল, মোহাম্মদ
তৌহিদ এবং এম মহসীন মিয়া। আমি তাদেরকেও শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি।
১৯৬৯ থেকে ২০১৮ দীর্ঘ
পথ পরিক্রমায় সিআরআই বাংলা এখন প্রাণবন্ত যৌবন। সিআরআই-কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বেতার কেন্দ্র
হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলা বিভাগসহ সকল বিভাগের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় আমরা গভীরভাবে
কৃতজ্ঞ। ইয়ান আন সিন হুয়া থেকে রেডিও পিকিং এবং আজকের
সিআরআই এর অনুষ্ঠান সম্প্রচারে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং এখনো
যারা অবদান রাখছেন তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। বিশেষত এই বেতারের শীর্ষ নেতা মহাপরিচালক
ওয়াং কেং নিয়ান’কে ধন্যবাদ জানাই। যার প্রচেষ্টায় সিআরআই আধুনিক বেতারে পরিণত হয়েছে।
আমরা মনেকরি সিআরআই সার্বিকভাবে বিশ্বের এখন প্রধান আন্তর্জাতিক তথ্য মাধ্যম। এই প্রচেষ্টার
সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা শ্রোতারা গর্ববোধ করি।
আমি
একইভাবে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রধান নেতা মাদাম ইউ কুয়াং
য়ূএ (আনন্দী)-কে। ২০০৩
সালের শেষের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত যার সুনিপুণ নেতৃত্বে এ
বিভাগের নবীন কর্মকর্তা-কর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরলস প্রচেষ্টা,
মেধা ও সৃজনশীল চিন্তা চেতনায় বাংলা অনুষ্ঠান শ্রোতাদের কাছে অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
শ্রোতাদের ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান
মালার ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে। বাংলা অনুষ্ঠানসূচি প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনের
মাধ্যমে উন্নত করার পর এখন সংবাদ প্রচারের তাৎক্ষণিকতা জোরদার করার পাশাপাশি বিভিন্ন
নিয়মিত ফিচার অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ও রকমারিতা সমৃদ্ধ করা হয়েছে। এসব নিয়মিত ফিচার
অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এবং বহু পর্যায়ে ও ক্ষেত্রে চীনের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিরাট সাফল্যকে তুলে ধরা হচ্ছে। ফলে বাংলা
অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও ভারতের শ্রোতাদের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে এবং ব্যাপক শ্রোতা ও
পাঠকদের কাছে এখন তা সমাদৃত। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এ অনুষ্ঠানের নিয়মিত ও বন্ধুভাবাপন্ন
অনেক শ্রোতাগোষ্ঠী রয়েছে যা সিআরআই বাংলা বিভাগের জন্য গর্বের এবং আনন্দের।
আমরা একিসাথে কৃতজ্ঞতা
জানাচ্ছি সিআরআই বাংলা বিভাগের বর্তমান প্রধান নেতা মাদাম
ইউ কুয়াং য়ূএ (আনন্দী)’র পূর্বে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অন্য ৫ জন নেতাদেরও।
সিআরআই বাংলা বিভাগের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে পরিচালক হিসেবে তাদেরও ভূমিকা ছিলো অনন্য।
আজকের সিআরআই তথা রেডিও পিকিং বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে শুরুতে দায়িত্ব পালন
করতেন তৎকালীন সিআরআই হিন্দী বিভাগের প্রধান মাদাম লি লি জুন। এরপর ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি
থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সিআরআই বাংলা বিভাগের পরিচালক ছিলেন মি. ফান ফু কুও। তিনিই হলেন
সত্যিকার অর্থে সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রথম পরিচালক। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রফেসর
লি ইউয়ান শান (-১৯৮৫), শি চিং উ (১৯৮৬-) এবং চুং শাওলি (-২০০৩)। সিআরআই বাংলা বিভাগের
উন্নয়নের পেছনে তাদের অবদানের কথা ইতিহাসে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ছিলো
সিআরআই বাংলা বিভাগ এবং শ্রোতাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন, সেদিন থেকে বাংলা অনুষ্ঠান
দৈনিক ৩০ মিনিটের স্থলে (আধ ঘন্টা) বেড়ে ১ ঘন্টা করা হয়েছে, দিনে ৩ বার সম্প্রচার। ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর সিআরআই বাংলা
ভাষার ওয়েবসাইট চালু হয় এবং যার বিষয়বস্তু প্রতিদিনই হালনাগাদ করা হয়। এই ওয়েবসাইটের
উন্নতিসাধন এবং বিষয়বস্তুর ক্রমাগত সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর পাঠকের মনোযোগ
আকৃষ্ট করতে পেরেছে এবং ক্রমেই চীনকে জানার জন্য বাংলা ভাষী পাঠকবন্ধুদের এক নতুন মাধ্যমে
পরিণত হয়েছে। তাছাড়া বাংলা সার্ভিসের উদ্যোগে “আমি তুমি সে” নামক বাংলা ভাষার একটি
ত্রৈমাসিক পত্রিকা ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশিত হতো। যা চীনের প্রকাশিত বাংলা বই বা পত্রিকার
অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছিলো এবং শ্রোতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করেছিলো।
যদিও তা পরবর্তিতে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে সিআরআই “পুবের জানালা” নামে একটি
দ্বিমাসিক বাংলা ম্যাগাজিন প্রকাশ করা শুরু করে যার বেশ কিছু সংখ্যা এখানো আমার কাছে
সযত্নে সংরক্ষণে রয়েছে। এই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা এবং ছবি আমাকে আকর্ষণ
করতো। বর্তমানে এটি আর প্রকাশ হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।
২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি
সিআরআই বাংলা বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশের ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুম। এর প্রথম চীনা পরিচালক হিসেবে যোগদেন
সিআরআই এর প্রতিনিধি ইয়াং ওয়েই মিং (স্বর্ণা)। এ ক্লাসরুমে বাংলাদেশীদের চীনা ভাষা
শেখানো হয়। বর্তমানে চীনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন খোং চিয়া চিয়া (প্রেমা)। এই
ক্লাসরুমের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি এবং আমাদের ক্লাব সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিভিন্ন
প্রচার প্রচারণায়। আমাদের ক্লাবের বেশ কয়েকজন সদস্য এখানে চীনা ভাষা শিখেছেন এবং
এখনো শিখছেন।
২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ বেতারের এফএম ব্যান্ডের ট্রান্সমিটারের
মাধ্যমে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিকেল ৫:৩০ থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত ১ ঘন্টা করে দু’বার সিআরআই
ইংরেজী ও বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে যথাক্রমে ১০৩.২ ও ১০৫.৪ মেগাহার্জে।
যা বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ১৮ ঘন্টা (সকাল ৬টা-৯টা ইংরেজী, ৯টা-১২টা বাংলা, ১২টা-সন্ধ্যা ৬টা ইংরেজী,
সন্ধ্যা ৬টা-রাত ৯টা বাংলা এবং ৯টা-১২টা ইংরেজী) অনুষ্ঠান প্রচার করছে শ্রোতাদের
জন্য যথাক্রমে ১০২ ও ৯০ মেগাহার্জে। শর্টওয়েভের পাশাপাশি আমিও এফএম ব্যান্ডে
অনুষ্ঠান শুনছি এবং আমার পরিচিতজনদের যাদের রেডিও সেট নেই তাদের মোবাইল ফোনে
অনুষ্ঠান শুনতে উৎসাহিত করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
এছাড়া সিআরআই ২০১৪ সালের
১ ডিসেম্বর থেকে ‘চায়না ডটকম’ নামে বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট চালু করে।
এভাবে চীন আন্তর্জাতিক
বেতারের বাংলা বিভাগ এখন বেতার সম্প্রচার, ওয়েবসাইট ও নিজস্ব পত্রিকায় সর্বাত্বক বিকাশের
এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে চীন
আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগ নিয়মিত রেডিও অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি দুটি
বাংলা ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক, টুইটার ও বেশতো-এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও
কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের সাহায্যে বাংলাভাষীদের সামনে প্রকৃত চীনকে তুলে ধরার কাজ করে
চলেছে। দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিআরআই বাংলা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমি মনে করি চীন আন্তর্জাতিক বেতার হচ্ছে চীনকে জানার
এক সুবর্ণ জানালা। আমি সহ অনেক বাংলাদেশী শ্রোতাবন্ধু সিআরআই-এর সঙ্গে বড় হচ্ছেন এবং
বাংলা বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মীবৃন্দের ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন। আমাদের মতে
চীনাদের কন্ঠে বাংলা ভাষা অর্থাৎ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার বাংলাদেশের
সংস্কৃতির জন্য অন্যতম বৃহত্তম সম্মান।
তাই
সবশেষে শ্রোতাবন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা আগের মতো আরও অধিকতর আগ্রহে চীন আন্তর্জাতিক
বেতার বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান শুনবেন, মতামত ও পরামর্শ দেবেনে এবং বেশী বেশী চিঠি ও
ই-মেইল পাঠিয়ে বাংলা বিভাগের মানউন্নয়নে আপনার মূল্যবান অবদান রাখবেন।
সফল
ও সার্থক হোক চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের ৫০তম বার্ষিকী সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব।
ধন্যবাদ।
১৯/১১/২০১৮
দিদারুল
ইকবাল
চেয়ারম্যান
সাউথ
এশিয়া রেডিও ক্লাব
বাড়ী-
৩৩৬, সেকশন- ৭,
রোড-
২, মিরপুর, ঢাকা- ১২১৬
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment