সিআরআইয়ের একজন নবীন শ্রোতা হিসাবে ৫০ বছর পূর্তির স্মৃতিচারণ করাটা নেহায়েতই বোকামী। তারপরেও বলা যায়, সিআরআই বাংলা বিভাগের ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ১৮/২০ বছরের বিভিন্ন কর্মকান্ড আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। আমার এই স্বল্প সময়ের স্মৃতি নিয়েই এই বিশেষ রচনা।
সিআরআইয়ের সাথে আমার অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের সূচনা হয় প্রায় ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালে। তখন আমি ২য় শ্রেণিতে পড়ি। বাংলাদেশে তখনকার ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গনআন্দোলন চলছে। সন্ধ্যা হলেই আমার বাবা তাঁর বিশাল বড় আকারের ন্যাশনাল প্যানাসনিক রেডিওটা নিয়ে বসতেন বাড়ির সামনে উঠানে। আমার বাবা আমাদের পাড়ার আরো লোকজনকে সাথে নিয়ে বিবিসি’র
খবর শুনতেন। শুধু বিবিসি’ই নয়, ডয়চে ভেলে, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও তেহরান, রেডিও রাশিয়া কোনটাই বাদ যেতো না। বিবিসিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক খবরাখবর বিস্তারিত ভাবে উঠে আসতো। তারা মূলত শুনতেন খবরাখবর। বিবিসির খবর শেষ হলে বয়োঃজৈষ্ঠরা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জম্পেশ আড্ডায় মেতে উঠতেন। আমাকে বাবা তখন রেডিওতে ধরিয়ে দিতেন 'রেডিও পিকিং'। রেডিও পিকিং থেকে তখন চীনা লোকজনের ভাঙা ভাঙা কন্ঠের বাংলাশুনতে আমার খুবই ভালো লাগতো। তখন বয়সের কারনে রেডিওর অনুষ্ঠান বিষয়ে তেমন কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু ভাঙা উচ্চারণের বাংলা বলার নতুন ঢংয়ের কারণে রেডিও পিকিংয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।
আর আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। রেডিও পিকিং তখন রেডিও পেইচিং থেকে রেডিও বেইজিং হয়ে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল (সিআরআই) তে নাম পরিবর্তন করে ফেলেছে। আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ঝুঁকের বশে একদিন ছোট্ট একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিই সিআরআই এর ঠিকানায়। আমার পাঠানো প্রথম চিঠিটিই সিআরআইতে পড়ে শোনানো হয়। নিজের নাম প্রথম কোন বিদেশী বেতার থেকে শুনতে পেয়ে এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম, সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। সেটাই ছিল প্রথম কোন বিদেশী বেতারে আমার পাঠানো প্রথম চিঠি। সে সময় একজন নবীন শ্রোতার চিঠি পাঠ করে তার মনের গভীরে স্থায়ী আসন করে নেয় সিআরআই।
১৯৯৭ সালের কোন এক মাসে আমার ঠিকানায় একটি চিঠি আসে সিআরআই থেকে। সেটাতে ছিল সুন্দর ছবি সম্বলিত ভিউ কার্ড, চমৎকার কাগজে ছাপানো অনুষ্ঠানসূচী আর ফেরত খাম। আমার ঠিকানায় আসা প্রথম চিঠি। তাও আবার দেশের বাইরে থেকে। এক অদ্ভূত সুখমিশ্রিত অনুভূতি। তবে সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছিলাম সুন্দর ছবিওয়ালা ভিউ কার্ডটি পেয়ে। কার্ডটি পাঠ্য বইয়ের ভিতরে রেখে দিয়েছিলাম আর মাঝে মাঝেই বই থেকে বের করে দেখতাম।
এরপর নিয়মিত সিআরআই শুনতাম আর মাঝে মাঝে সময় পেলেই চিঠি লিখতাম। ইথারে ভেসে আসতো আমার নাম। সিআরআই থেকে প্রায়ই চিঠি আসতো। সেখানে কখনো থাকতো নানা উপহার সামগ্রী। এভাবে রেডিও শুনার প্রতি আমার আগ্রহ সৃষ্টি করে সিআরআই। আমার দেখাদেখি বন্ধুদের অনেকেই রেডিও শুনা শুরু করে। আমার এলাকায় বৃদ্ধি পেতে থাকে সিআরআই এর শ্রোতার সংখ্যা।
এভাবে রেডিও শুনতে শুনতে একসময় বন্ধুদের নিয়ে শ্রোতা ক্লাব গঠনের চিন্তা করি। ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বর গঠন করি ‘রেমাশ আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা সংঘ’ নামে রেডিও শ্রোতা ক্লাব। শ্রোতা ক্লাব গঠনের পর সিআরআইতে লেখা অনেক বেড়ে গেলো। প্রতিদিন অনুষ্ঠান শুনা আর চিঠি লেখা অভ্যাসে পরিনত হলো।
২০০৩ সালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সিআরআই বাংলা বিভাগের আয়োজনে শ্রোতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আমার ক্লাবের পক্ষ থেকে আমি
সেই শ্রোতা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেটাই ছিল প্রথম বারের মতো কোন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতা সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণ। সেখানে Raffle Draw তে লটারীর মাধ্যমে একটি Kchibo-560 মডেলের ডিজিটাল রেডিও পুরস্কার পাই যা কোন বেতার কেন্দ্র থেকে পাওয়া আমার প্রথম রেডিও। এই রেডিওটি আমি দীর্ঘ ৭ বছর ব্যবহার করেছি। যদিও রেডিওটি এখন আর ভালো নেই, তবুও এটি সিআরআই এবং চীনের সাথে আমার বন্ধুত্বর একটি অমূল্য স্মৃতি চিহ্ন হয়ে রক্ষিত আছে আমার ঘরে।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৫। চীনাদের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো বসন্ত উৎসব। এ উপলক্ষে দূতাবাস বন্ধ। তবুও সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব, ঢাকা শাখার অনুরোধে সেদিন ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের সাংস্কৃতিক সচিব মি. ইউপলাই। সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের চেয়ারম্যান দিদারুল ইকবালের সিআরআই বাংলা বিভাগের মনিটর হিসাবে নিয়োগ পাওয়ায় ক্লাবের ঢাকা শাখা চীনা দূতাবাসে দিদারুল ইকবালকে সংবর্ধনা প্রদান করে। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ এর মহাসচিব জনাব জিল্লুর রহমান জিল্লু। এ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে বেশ কয়েকজন শ্রোতা অংশগ্রহণ করেন। আমারও সুযোগ হয়েছিল সে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার। এ রকম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলে হয়তো কোনদিনই সুযোগ হতো না চীনা দূতাবাসের অভ্যন্তর বা হলরুমে প্রবেশ করার।
চীনের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কিছু নমুনা আমি সেখানে দেখতে পেলাম। চমৎকার সব শিল্পকর্ম দেয়ালজুড়ে টানানো আছে। সেখানে চীনের গ্রেট ওয়ালের বিশাল একটি প্রতিকৃতি রয়েছে। আমাদের চীনের ঐতিহ্যবাহী সবুজ চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। সাংস্কৃতিক সচিব মি. ইউপলাই আমাদের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়া বন্ধুর মতো আন্তরিক ব্যবহার করলেন। প্রথমবার চীনা দূতাবাসে যাওয়ার সেই অনুভূতি, সেই দিনের স্মৃতিগুলো কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
পরবর্তীতে আমার আরো অন্তত দুই বার ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবই চীনা বন্ধুদের কল্যানে, সিআরআই নিয়ে কাজ করার সুবাদে। ২০০৮ সালে বাংলা বিভাগের বর্তমান উপ-পরিচালক ছাও ইয়ান হুয়া সুবর্ণা’র সাথে। সুবর্ণা তখন সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রতিনিধি হিসাবে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কালচারাল সেকশনে কাজ করতেন। অন্যবার বাংলা বিভাগের কর্মী ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা’র সাথে। স্বর্ণা তখন ঢাকায় সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রতিনিধি ও এসএমএফ-কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের পরিচালক হিসাবে কর্মরত।
২০০৮ সালে চীন মহাকাশযান শেনজু-৫ উৎক্ষেপন করে। এ উপলক্ষে সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রচারণার অংশ হিসাবে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব আয়োজন করে মহাকাশ ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে মহাকাশযান শেনজু-৫ এর মহাকাশ যাত্রার বিভিন্ন ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মূলত স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি ও সচেতনতা সৃষ্টির সফল এ আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি।
২০০৯ সালে ঢাকায় জাতীয় স্কাউট ভবনে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের ওয়েব সাইট উদ্বোধন উপলক্ষে এক বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি জনাব শওকত মাহমুদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিআরআই বাংলা বিভাগের তখনকার বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ জনাব আবাম ছালাউদ্দিন, সাবেক বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ জনাব মহিউদ্দিন তাহের, সিআরআই বাংলা বিভাগের সাবেক কর্মী রাশিদা তাহের। আমি উক্ত অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলাম।
২০১০ সালে ঢাকায় অমর একুশে বই মেলাতে সিআরআই প্রথম বারের মতো সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুম এর ব্যানারে অংশগ্রহণ করে। সে সময় প্রায় প্রতিদিন মেলায় সিআরআই এর স্টলে উপস্থিত থেকে স্টলে আগত সিআরআই এর শ্রোতা ও কৌতুহলী শুভানুধ্যায়ীদের সিআরআই সম্পর্কে অবহিত করা, অনুষ্ঠানসূচী ফটোকপি করে বিতরণ, সিআরআই বাংলা বিভাগের সাময়িকী পূবের জানালা’র কপি বিতরণ এসব করে কখন যে সময় চলে যেতো টেরই পেতাম না। এসব কাজে সিআরআই মনিটর দিদারুল ইকবালের সার্বক্ষনিক সঙ্গী হিসাবে থাকতাম সবসময়। এখানে চীনা বন্ধু ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা সম্পর্কে না লিখলে কৃপনতা করা হবে। স্বর্ণা সব সময় সিআরআই এর যে কোন শ্রোতার সাথে মিশতেন খুবই চেনা বন্ধুর মতো। কুটনৈতিক প্রটোকলের ধার ধারতেন না খুব একটা। স্বর্ণার সাথে সিআরআই এর সাবেক বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ তাহের ভাই, সিআরআই এর বাংলাদেশ সংবাদদাতা মাহমুদ হাশিম ভাই, দিদারুল ইকবাল সহ আমি একাধিকবার বাংলা একাডেমির ক্যান্টিনে বসে নুডুলস খেয়েছি। অবশ্য স্বর্ণা নুডুলস খেতেন না, তিনি পছন্দ করতেন স্যুপ।
২০১১ সালের অমর একুশে বই মেলায় সিআরআই ২য় বারের মতো অংশগ্রহণ করে। দুই ইউনিটের বিশাল স্টল। সিআরআই এর স্টলে প্রতিদিন বিকাল বেলায় উপস্থিত হতাম। রাতে মেলা শেষ হলে বাসায় ফিরতাম। সিআরআই এর শ্রোতাবন্ধুদের অনেকেই মেলায় আসতেন। তাদের সাথে দেখা হতো , কথা হতো, হতো প্রাণবন্ত আড্ডা। বইমেলা উপলক্ষ্যে সিআরআই প্রকাশ করে ‘পূবের জানালা’র বিশেষ সংখ্যা। সিআরআই মনিটর দিদারুল ইকবাল প্রকাশ করেন ‘ডিএক্সীং নিউজ’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। এগুলো ফ্রি পেয়ে শ্রোতারা খুবই খুশী হতেন। এছাড়া মেলার প্রতিদিনের খবরাখবর ছবি সহ দিদারুল ইকবাল সিআরআই তে পাঠাতেন। এসব কাজে দিদারুল ইকবালের সব সময়ের সঙ্গী ছিলাম আমি। সিআরআই এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের প্রথম চীনা পরিচালক মিস ইয়াং ওয়েই মিং (স্বর্ণা), সিআরআই এর সাবেক বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের কনসালটেন্ট ও শিক্ষক মহিউদ্দিন তাহের, সিআরআই এর বাংলাদেশ সংবাদদাতা মাহমুদ হাশিম, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির উপ-পরিচালক আবু জুবায়ের, সিআরআই এর বাংলাদেশ মনিটর দিদারুল ইকবাল, সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার লিমা, আমি এবং কখনো সিআরআই এর কোন শ্রোতাবন্ধু সকলে মিলে স্টলে কিংবা বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনের বহেরা তলায় প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠতাম। তাহের ভাই বলতেন তাঁর দীর্ঘ চীন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা। স্বর্ণা একদিন বললেন চীনাদের সাপের স্যুপ খাওয়া সম্পর্কে। হাশিম ভাই বলতেন চীন তার দ্বিতীয় জন্মভূমি। এসব সুখস্মৃতি কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সিআরআই শ্রোতা সম্মেলন আয়োজন করা হয়। আমি এ সম্মেলনে আয়োজক কমিটিতে মিডিয়া, লিসনার্স রিলেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। ২০১১ সালের শ্রোতা সম্মেলন ছিল সিআরআই এর সর্ববৃহৎ শ্রোতা সম্মেলন। এ সম্মেলনে সর্বাধিক শ্রোতা বন্ধুর উপস্থিতি আমাদের আয়োজনকে স্বার্থক করেছিল। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠানস্থল। এতে চীনা সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ সম্মেলনে উপস্থিত সব শ্রোতা বন্ধুকে পুরস্কৃত করা হয়। দেশের প্রায় সকল মিডিয়ার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
২০১১ সালের বই মেলার মঞ্চে প্রতিদিন একাধিক বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হতো। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে সেমিনারের বিষয় ছিল চীনা ভাষায় অনুবাদ সাহিত্যঃ প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআরআই এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের প্রথম চীনা পরিচালক মিস ইয়াং ওয়েই মিং (স্বর্ণা)। আলোচনায় অংশ নেন সিআরআই এর সাবেক বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের কনসালটেন্ট ও শিক্ষক মহিউদ্দিন তাহের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক জনাব মনসুর মুসা। আমি উক্ত সেমিনারে নিজে অংশগ্রহণ করি এবং অংশগ্রহনকারীর উপস্থিতি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করি।
২০১১ সালে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে ‘এ বিউটিফুল চায়না’ শিরোনামে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। চীনা রাষ্ট্রদূত, তথ্যমন্ত্রী, জাদুঘরের মহাপরিচালকসহ অনেকেই সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ চিত্র প্রদর্শনীর ছবিগুলো চীনকে জানার জন্য অনেক বেশী সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে আমি মনে করি।
২০১১ সাল ছিল সিআরআই এর ৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশে সিআরআই এর ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনে বিশাল কর্মসূচী গ্রহণ করে সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব। এ ক্লাবের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা ও বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে রেমাশ আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা সংঘ। ঢাকার সাভারে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিআরআই এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের প্রথম চীনা পরিচালক মিস ইয়াং ওয়েই মিং (স্বর্ণা)।
৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান (সিগনেচার ক্যাম্পেইন) এর আয়োজন করা হয়। দেশের খ্যাতনামা শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আমলা, রাজনীতিবিদ, নানা শ্রেণি পেশার লোকজনসহ সিআরআই এর বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রোতা বন্ধুরা এতে অংশ গ্রহণ করেন।
৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল চট্টগ্রামে। শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও শ্রোতা সম্মেলনের আয়োজন করা হয় সেখানে। হালিশহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক শাম্মী আরা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিআরআই এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি, সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের প্রথম চীনা পরিচালক মিস ইয়াং ওয়েই মিং (স্বর্ণা)। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন সিআরআই এর বিদেশী ভাষা বিশেষজ্ঞ জনাব আবাম সালাউদ্দিন। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রোতা বন্ধুরা এ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
এখানে একটি ঘটনা না
লিখলেই নয়। শ্রোতা সম্মেলন শেষে ইকবাল ভাই আমাকে দায়িত্ব দিলেন স্বর্ণাকে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে পৌঁছে দিতে। চট্টগ্রামে আমিও নতুন। কিছুই চিনি না। সাথে স্বর্ণার মতো কূটনৈতিক অতিথি। বন্ধু সিরাজুল ইসলাম হৃদয়ের সহায়তা নিয়ে স্বর্ণাকে পৌঁছে দিলাম চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে।
সেবার চট্টগ্রামে যাবার সময় সালাউদ্দিন ভাই শুনিয়েছিলেন তাঁর ছাত্র জীবনে মাও সেতুং কে চিঠি লিখবার কথা। মাও সেতুং সে চিঠির জবাব দিয়েছিলেন, যা বর্তমানে সিআরআই ভবনে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া তিনি মাও সেতুং এর সাথে দেখা করার সুখস্মৃতি আমাদের শুনালেন।
বসন্ত উৎসব হলো চীনাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। ঢাকায় সিআরআই কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের আয়োজনে বসন্ত উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই ২০১০ এবং ২০১১ সালে। এর আগে বসন্ত উৎসব সম্পর্কে জেনেছিলাম সিআরআই এর মাধ্যমে। দু’বারই বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সিআরআই-এসএমএফ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের পরিচালক মিস ইয়াং ওয়েই মিং স্বর্ণা’র কাছ থেকে। এ অনুষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রদূত, বেতার-টিভির ডিজি, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের শিক্ষার্থী, সিআরআই এর শ্রোতাবন্ধুদের কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন। বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়। নাচ-গান আর নানা অনুষঙ্গে ভরপুর এসব অনুষ্ঠান সত্যিই উপভোগ্য ছিল।
২০১৫ সালে ঢাকায় সোনারগাঁ হোটেলে সিআরআই ও চায়না দূতাবাস যৌথভাবে আয়োজন করে চায়নীজ ফুড ফেস্টিভাল। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং। ছিলেন সিআরআই বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক ছাও ইয়ান হুয়া (সুবর্ণা)। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে চায়নীজ খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। উক্ত আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আমাদের ক্লাব থেকে ২ জন অংশগ্রহণ করি। সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশের সৈয়দ রেজাউল করিম বেলাল ভাই, জিল্লুর রহমান জিলু ভাই, ওসমান গণী ভাই, দিদারুল ইকবাল ভাই ও তাছলিমা আক্তার লিমা সহ আমরা বেশ উপভোগ করি জমকালো অনুষ্ঠানটি।
ঢাকায় সিআরআই বাংলা বিভাগের ব্যুরো অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য বাংলা বিভাগের প্রধান ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার সাথে রয়েছেন সিআরআই এর কর্মী খোং চিয়া চিয়া প্রেমা। তাদের অভ্যর্থনা জানাতে সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ ২০১৮ সালের ১১ মে ঢাকায় আয়োজন করে সংবর্ধনা ও শ্রোতা সম্মেলনের। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার শ্রোতাবন্ধুরা এ সম্মেলনে অংশ নেয়। এ আয়োজনের প্রায় সকল কাজে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। ফলে সফল ভাবে আয়োজনটি সমাপ্ত হয়।
২০০৩ সালের পর ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠিত সিআরআই এর জাতীয় ও আঞ্চলিক সবগুলো শ্রোতা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। এছাড়া সিআরআই লিসনার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানে শুধু অংশগ্রহণই নয়, আয়োজকদের সহযোগী (স্বেচ্ছাসেবক) হিসাবে কাজ করেছি।
২০০৫ সালে আমাদের ক্লাব সিআরআই থেকে নিবন্ধন পায়। ঐ সময়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সিআরআই থেকে আমার চিঠি প্রচারিত হতো। এভাবেই সিআরআইয়ের সাথে আমার আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গভীরতা লাভ করে। এটুকু বলতে পারি, সিআরআই বাংলা বিভাগের ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ১৮/২০ বছরের বিভিন্ন কর্মকান্ড আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। ফলে বলা যায় সিআরআই এর মাধ্যমেই চীনের সাথে আমার পরিচয়। সিআরআই এর মাধ্যমেই চীনের সাথে গভীর বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। যে চীনকে আমি চিনি, যে চীনকে নিয়ে ভাবি, যে চীনকে নিয়ে আমার হৃদয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনি, সিআরআই এর মাঝে খুঁজে পাই সেই মহান চীনকে।
চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) বাংলা বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণ জয়ন্তী সফল ও সার্থক হোক, বাংলা বিভাগের প্রসার, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সুখ্যাতি লাভ করুক এ প্রত্যাশি করি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে।
ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছান্তে,
মোঃ শহীদুল কায়সার লিমন
সভাপতি
রেমাশ আন্তর্জাতিক বেতার শ্রোতা সংঘ
বড়নল, ভিটিপাড়া (বরমী), শ্রীপুর,
গাজীপুর-১৭৪৩, বাংলাদেশ।
মোবাইল- +৮৮০১৭১১১০৮৬৮৪,
+৮৮০১৯১১১০৮৬৮৪
ইমেইল- shahidulkaysar@gmail.com
No comments:
Post a Comment