ভারতের শক্তিশালী
ব্যাটিং লাইনআপকে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানের
ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকদের ৮ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ
বারের মতো এশিয়া কাপ জিতে নিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।
৬ মার্চ রবিবার
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের
করা ১২০ রানের জবাবে ১ ওভার ১ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌছেঁ যায় টি-টোয়ান্টির
এক নম্বর দল ভারত।
বৈরি
আবহাওয়ার কারণে
হাইভোল্টেজ এ
ম্যাচটি শুরু
হয় বাংলাদেশ
সময় রাত
সাড়ে নয়টায়। রাত
নয়টা দশ
মিনিটে টস
জিতে প্রথমে
ফিল্ডিং করার
সিদ্ধান্ত নেয়
ভারতের অধিনায়ক
মাহেন্দ্র সিং
ধোনি। আবহাওয়ার
কারনে ওভার
কর্তন করে
সীমিত ওভাবে
ম্যাচটির আয়োজন
করে কর্তৃপক্ষ।
ফলে দুই
দল ১৫
ওভার করে
খেলার সুযোগ
পায়। টাইগারদের
হয়ে উদ্বোধনী
ব্যাটিং জুটি হিসেবে
মাঠে নামেন
তামিম ইকবাল
ও সৌম্য
সরকার। ইনিংসের
চতুর্থ ওভাবের
শেষ বলে
আশিষ নেহারা
১৪ রানের
মাথায় ফিরিয়ে
দেন সৌম্য
সরকারকে। তার ৯ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি বাউন্ডারি। সৌম্য সরকারের পর বিদায় নেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তামিম। ১৭ বলে দুটি চারে তামিম
করেন ১৩ রান। দলীয় ৩০ রানের মাথায় দ্রুত ২
উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে ওঠে সাকিব আল হাসান আর সাব্বির
রহমানের ৩৪ রানের জুটিতে। ইনিংসের দশম ওভারে অশ্বিনের বলে বুমরাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। বিদায়ের আগে ১৬ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ২১ রান করেন সাকিব। দলীয় ৬৪
রানের মাথায়
বাংলাদেশের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে
হারিয়ে খেলতে থাকে। ব্যাটে বলে ঠিকমতো
সংযোগ
হচ্ছিল না মুশফিকুর রহিমেরও। ইনিংসের ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে
রান আউট হয়ে সাজ
ঘরে ফেরেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। পরের বলেই ক্যাচ
দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাদেজার বলে কোহলির
তালুবন্দি হন তিনি। নিয়মিত উইকেট পড়ার
পাশাপাশি পর্যাপ্ত চার-ছক্কা মারতে না পারার ব্যর্থতায় শত রান
পেরোনোই কঠিন হয়ে পড়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের। এরপরই সাত নম্বর ব্যাটম্যান হিসেবে
মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মূলত তখনই খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। সাব্বিরের
সাথে জুটি বেধে শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। ব্যাটে ঝড়
তুলেন মাহমুদুল্লাহ। হারদিক পান্ডের করা ১৪তম ওভারে ১৯ রান তুলে নেন তিনি। কোনো
উইকেট না পাওয়া পান্ডের ৩ ওভারে ওঠে ৩৫ রান। বাকি চার বোলার পান একটি করে উইকেট। মাত্র
১৩ বল মোকাবেলা করে রিয়াদ দুটি করে চার ও ছক্কার
সাহায্যে করেন ৩৩ রান। ওভারটি ছিল এমন, ৪+৬+২+৬+১+১+১=২১ রান। এই একটি ওভারে পুরো ম্যাচের
চিত্রটাই পাল্টে দেন বাংলাদেশ দলের এই
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহ শুধু নিজের ঝুলিটাকেই সমৃদ্ধ
করেননি, দলের ইনিংসটাকেও নিয়ে গেছেন একটা সম্মানজনক পর্যায়ে, যেটি শেষ পর্যন্ত
দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেয়। সাব্বিরের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি জমে ওঠে মাত্র
২০ বলে। এ নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা চার ম্যাচে অপরাজিত থাকলেন ফিনিশার মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহকে মূল্যবান
সহায়তা দিয়ে সাব্বির রহমানও
শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ২৯ বলে
৩২ রান
করে। মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। শেষ
ওভারটা ভালো না
হলেও ১২০
রান লড়াই করার মতো স্কোর ছিল।
১২১ রানের টার্গেটে
ভারতের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন রোহিত শর্মা ও শিখর
ধাওয়ান। প্রথম ওভারে টাইগারদের হয়ে
বোলিংয়ে আসেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই রোহিত
শর্মাকে সাজঘরে ফেরান আল আমিন হোসেন। স্লিপে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েন ১ রান করা
রোহিত। দলীয় ৫ রানের মাথায় রোহিত শর্মাকে বিদায় করেন আল আমিন
হোসেন। এরপর উইকেটে জুটি গড়েন বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ান।
প্রথম চার ওভারে ১৯ রান দিয়ে ভারতকে চাপেই রেখেছিল আল-আমিন হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। তবে টুর্নামেন্টে
প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তরুণ পেসার আবু হায়দার রনির করা পঞ্চম ওভারে ১৪ রান
নিয়ে চাপটা ঝেড়ে ফেলেন কোহলি ও ধাওয়ান। দলের একমাত্র স্পিনার সাকিব আল হাসানও পরের ওভারে দেন ১৫ রান। একাদশ ওভারে আবার ফেরা সাকিবের প্রথম দুই বলে দুই চার মেরে ফিফটি তুলে নেন ম্যাচসেরা ধাওয়ান। নিজের প্রথম দুই ওভারে মাত্র সাত রান দেওয়া নাসির হোসেন তৃতীয় ওভারে আর কোহলি-ধাওয়ানকে আটকে রাখতে পারেননি। ওই ওভারে ১৫
রান নিয়ে আস্কিং রানরেট নিজেদের বাগে নিয়ে আসে ভারত। অর্ধশতক
হাঁকিয়ে ধাওয়ান ইনিংসের ১৩তম ওভারে তাসকিনের বলে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত
ক্যাচে বিদায় নেন। আউট হয়ে ফেরার সময় ৪৪ বলে ৯টি চার আর একটি
ছক্কা হাঁকিয়ে ৬০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন তিনি। অথচ এশিয়া কাপের
পুরো টুর্নামেন্টে তিনি করেছিলেন মাত্র ১৯
রান। ধাওয়ান চলে গেলেও কোহলি ২৮ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪১ রান
করে অপরাজিত থাকেন। আর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নেমেই খেলা শেষ করে দেন। আল আমিনের করা চতুর্দশ ওভারে দুই ছক্কা আর এক চারে অপরাজিত থেকে ভারতকে জয়ের
বন্দরে নিয়ে যান দলের অধিনায়ক, ৬ বলে ২০ রান। সাত বল বাকি
থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১২১ রান সংগ্রহ করে ফেলে
ভারত।
বলাবাহুল্য, ২০১২
সালে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেই
বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন জাগিয়েছিল। সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র দুই রানে
হেরে হতাশ হতে হয়েছিল তাদেঁর। এবারের আসরে শ্রিলংঙ্কা এবং
পাকিস্তানকে হারিয়ে আবারও বাংলাদেশ পেয়ে যায় ফাইনালের
টিকেট। ম্যাচটিকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা জাগিয়েছিল বাংলার টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ভালো
খেলেও সে প্রত্যাশা আর পুরন করতে পারেনি কোহলি-ধাওয়ান-ধোনির
ব্যাটিং নৈপুণ্যে।
খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের শিখর ধাওয়ান। আর পাঁচ খেলায় ১৭৬ রান করে
ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাব্বির
রহমান।
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় প্রবল কালবৈশাখীর ছোবলে পড়ে এশিয়া কাপ ফাইনাল।
আবহাওয়া বিভাগ আগেই সতর্ক করে বলেছিল বিকেলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে। সেই শঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়। মেঘের গর্জন আর বৃষ্টিপাত শুরু হলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে পুরো শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ফলে ম্যাচ শুরু হওয়ার
আগেই কালবৈশাখীর ছোবলে ভেস্তে যেতে বসেছিল এশিয়া কাপ ফাইনাল।
পরে বৃষ্টি থামতে শুরু করলে খেলার সময় ও ওভার কমিয়ে আনা হয় এবং রাত সাড়ে নয়টায়
খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলার সংক্ষিপ্ত
স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ১২০/৫ (তামিম ১৩, সৌম্য ১৪, সাব্বির ৩২*,
সাকিব ২১,
মুশফিক ৪,
মাশরাফি ০,
মাহমুদউল্লাহ
৩৩*; বুমরাহ
১/১৩, অশ্বিন
১/১৪, জাদেজা
১/২৫, নেহরা
১/৩৩)
ভারত: ১৩.৫ ওভারে
১২২/২ (রোহিত ১, ধাওয়ান ৬০, কোহলি ৪১*, ধোনি ২০*; তাসকিন ১/১৪, আল-আমিন ১/৩০)
দিদারুল ইকবাল
চীন আন্তর্জাতিক
বেতার (সিআরআই)
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment